বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিরোধের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি লন্ডনে নির্বাসিত, এক অনন্য কৌশলী নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংগ্রামে। যদিও তিনি সরাসরি দেশে উপস্থিত নন, তবুও তাঁর দূরদৃষ্টি ও নেতৃত্বের কারণে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন শক্তিশালী একটি জাতীয় বিদ্রোহে পরিণত হয়েছে।
তারেক রহমানের নেতৃত্বের পেছনে ছিল এক গভীর রাজনৈতিক দর্শন। তিনি জনগণের অধিকারের সংগ্রামকে একটি বৃহত্তর আন্দোলনে পরিণত করেন, যেখানে দেশের গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম শুরু হয়। গত এক দশকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন এই প্রতিরোধ আন্দোলন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার তীব্র প্রতিবাদ তৈরি করেছে।
তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর দশটি মূল দাবিতে একটি ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবি। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে একক দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। বিএনপি’র এই আন্দোলনে দেশের ৪০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়, যা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষের এক প্রতিফলন।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক কৌশল ও নির্দেশনায় বিএনপি দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকে আরও দৃঢ় করতে সক্ষম হয়। তাঁরা ছাত্র-যুবকদের পাশে দাঁড়িয়ে, জনগণের প্রতি সঠিকভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আন্দোলন পরিচালনা করেন। বিএনপি’র দলীয় সদস্যরা বলেন, তারিক রহমান কখনোই ব্যক্তিগত বা দলীয় কৃতিত্বের জন্য এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটানো এবং একটি জাতীয় বিদ্রোহ গড়ে তোলা।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় তারেক রহমান আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোতেও সক্রিয় ছিলেন, বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি গণসমর্থন সৃষ্টি করেন। তিনি দেশের জনগণকে বিভিন্ন সময়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের আহ্বান জানান। ১৬ জুলাই ২০২৪ তারিখে, তিনি লেখেন, “আমি বিস্মিত এবং দুঃখিত যে আমাদের ছাত্ররা শুধুমাত্র কোটা সংস্কারের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল, কিন্তু তাদের উপর গুলি চালানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই বর্বর শেখ হাসিনার সরকার একবার আবার প্রমাণ করল যে তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সহ্য করতে পারবে না।”
তারেক রহমান, যে দেশের বাইরে বসেও আন্দোলনকে সমর্থন প্রদান করছিলেন, আন্দোলনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন। ১৯ জুলাই তিনি বলেন, “ছাত্রদের ওপর আর গুলি চালানো হবে না। যদি তারা অতিরিক্ত চলে যায়, তবে এর পরিণতি তাদের নিজেদের বহন করতে হবে।”
তারেক রহমানের এই চূড়ান্ত আপিল দেশের নাগরিকদের একে অপরকে সমর্থন করতে এবং এ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্ধুদ্ধ করে। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি দলের কর্মীরা দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তাদের প্রাণ এবং শ্রেষ্ঠত্বের সবকিছু উজাড় করে দেয়।
তারেক রহমানের মতে, জুলাই-আগস্টের এই সংগ্রাম ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসের একটি গুরুতর অধ্যায়, যা প্রতিরোধ, বর্বরতা ও ত্যাগের দ্বারা চিহ্নিত। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ একবার আবার অত্যাচারের বিরুদ্ধে উঠেছে, একবার আবার শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে।”
তিনি দেশের জনগণের প্রতি আরও বলেন, “এখনই সময় এসেছে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার। যেখানে শাসন হবে ন্যায়, স্বচ্ছতা ও জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে।”
বাংলাদেশের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে এক ব্যক্তি, তারেক রহমান, তার দূরদৃষ্টির মাধ্যমে এক নতুন রাজনৈতিক সংগ্রামকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।