অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি দেশের টেকসই রাজনৈতিক সমাধানের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক যাত্রা ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ চলছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারও অন্তর্ভুক্ত।”
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতির জন্য সব হুমকি মোকাবিলায় বিভেদের ঊর্ধ্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। “আমরা একসাথে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ব, যেখানে স্বৈরাচার আর কখনো মাথা তুলতে পারবে না।”
ড. ইউনূস বলেন, জুলাই জাতির মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে—একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমানাধিকার ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের আশা। তিনি উল্লেখ করেন, হাজারো মানুষের আত্মত্যাগ জাতিকে বিরল সংস্কারের সুযোগ করে দিয়েছে এবং এটি যেকোনো মূল্যে সংরক্ষণ করতে হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, পতিত স্বৈরাচার ও তাদের স্বার্থপর সহযোগীরা এখনো সক্রিয় এবং দেশের অগ্রগতি ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, ঠিক এক বছর আগে এই দিনে জুলাই অভ্যুত্থান চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে, দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসনের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে। তিনি বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান, যাদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম এই ঐতিহাসিক সাফল্য নিয়ে এসেছে।
তিনি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন সাহসী তরুণ, শ্রমিক, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের, যারা স্বৈরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছেন। আহত, স্থায়ীভাবে পঙ্গু বা দৃষ্টিশক্তি হারানো সব জুলাই যোদ্ধার প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
ড. ইউনূস বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল ১৬ বছরের দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে এক সম্মিলিত বিস্ফোরণ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত একটি নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। জনগণের হাতে গণতন্ত্র ও দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার এ লক্ষ্য পূরণে রাষ্ট্রের সব খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। জুলাই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত মামলাগুলো দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ ও আহতদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।