বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করবে, যেমন তারা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রত্যাখ্যান করেছিল।
শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ সিটি ইউনিট আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে।
মির্জা আব্বাস বলেন, “মানুষকে আগে ভোট দিতে শেখান। তারপর পিআর সিস্টেম নিয়ে কথা বলুন। এই ধরনের অদ্ভুত পরীক্ষা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করবেন না।” তিনি অভিযোগ করেন, পিআর পদ্ধতি চালুর পেছনে কূট উদ্দেশ্য রয়েছে।
তার মতে, কিছু দল এই পদ্ধতিতে অংশ নেবে, কিছু দল নেবে না। তারপর বলা হবে, নির্বাচন করা যাচ্ছে না এবং সরকারকে আরও সময় দেওয়া প্রয়োজন। “এ ধরনের ফন্দি-ফিকির বন্ধ করুন,” তিনি যোগ করেন।
বিএনপি নেতা বলেন, গত ১৭ বছরে অনেক প্রবীণ ভোটার ভোট দেওয়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছেন, আর নতুন প্রজন্মের ভোটাররা এখনো সরাসরি ভোট প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা পায়নি।
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা যখন ইভিএম চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, তখনও মানুষ তা গ্রহণ করেনি। এই পিআর সিস্টেমও মানুষ গ্রহণ করবে না।”
সমাবেশে মির্জা আব্বাস জামায়াতে ইসলামীকেও সমালোচনা করে বলেন, একটি দল সবসময় বিএনপির বিপরীত কাজ করতে চায়। তারা নিজেদের যোগ্যতায় কখনো মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেনি। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি, এখন এনসিপির সঙ্গে থেকেও তারা সাফল্য পাবে না।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণ ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, যা দলটির জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়েছিল। এর ফলে অনেক নেতা ফাঁসির দণ্ড পান, এমনকি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদেরকেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মির্জা আব্বাস সতর্ক করে বলেন, “একই ভুল আবার করবেন না। এটি অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।”
তিনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ও দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের সম্মানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন নিয়ে বিলম্বের জন্য সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সরকার কেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে দেরি করছে? এর পেছনে কী ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে, তা শুধু আল্লাহ জানেন।”
বিএনপি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের সহায়তায় সরকারের উদাসীনতারও সমালোচনা করেছে। মির্জা আব্বাস বলেন, “যদি সরকার তাদের সহায়তা করতে না পারে, তা হলে শুধু জানিয়ে দিন। বিএনপির নেতাকর্মীরা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।”
তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ নৈতিকভাবে ভেঙে পড়েছে। “এই সরকার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পচে গেছে,” তিনি বলেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।