ঢাকার উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার পর নগর পরিকল্পনাবিদরা RAJUK এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে জনবহুল ভবন নির্মাণ এবং পরিচালনার অনুমোদন দিয়ে এই দুর্ঘটনার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (BIP) এই উদ্বেগ প্রকাশ করে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেন, বিমানবন্দরের পাশে থাকা ভবনগুলো আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় পরিকল্পনা নীতিমালা লঙ্ঘন করে গড়ে উঠেছে। ১৯৯৫ সালের ঢাকা নগর পরিকল্পনা এবং প্রস্তাবিত বিস্তারিত অঞ্চল পরিকল্পনাতেও এসব নিয়ম উপেক্ষিত।
BIP-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তমজিদুল ইসলাম জানান, বিমানবন্দরের চার কিলোমিটারের মধ্যে উচ্চতা ১৫০ ফুটের নিচে এবং জনসমাগমহীন স্থাপনা রাখা উচিত। কিন্তু হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরে বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি বলেন, “স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদের মতো জনবহুল প্রতিষ্ঠান একেবারেই রাখা যাবে না। অথচ বাস্তবে এসবই গড়ে উঠেছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এখন ক্রমাগত বাড়ছে।”
BIP সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান জানান, অনেক ভবন কাঠামোগতভাবে অযোগ্য হলেও প্রভাব খাটিয়ে বা ঘুষ দিয়ে অনুমোদন আদায় করা হয়েছে। মাইলস্টোন স্কুল ভবনের একাধিক ভবনও কাঠামোগত নিরাপত্তার ছাড়পত্র পায়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, “বিমানবন্দর যখন স্থাপন করা হয়, তখন আশেপাশে নগরের বিস্তার ছিল না। কিন্তু এখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে নগরায়ণ হয়েছে। ২০০২ সালে RAJUK জলাভূমিতে স্কুল নির্মাণের অনুমোদন দেয়, যা আন্তর্জাতিক মানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।”
তিনি RAJUK, বেবিচক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কর্মকর্তাদের এই দুর্ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত করেন এবং শিশু মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী মনে করেন।
পরিকল্পনাবিদরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, জনবহুল ভবনগুলোকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হোক এবং যে ভবনগুলোকে সরানো সম্ভব নয়, তাদের উচ্চতা কমিয়ে এনে বিমানবন্দর সংক্রান্ত নিয়মে সামঞ্জস্য আনা হোক। অন্যথায় এমন দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তারা সতর্ক করেন।