বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে আরও এক ধাপ অগ্রসর হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায়। সোমবার, ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার জানান, বাংলাদেশকে প্রাথমিক ও কারিগরি শিক্ষার খাতে ২৬ মিলিয়ন ইউরো অনুদান প্রদান করেছে ইইউ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “শিক্ষা একটি ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের অন্যতম শক্তিশালী বিনিয়োগ। বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কার উদ্যোগে আমরা গর্বের সঙ্গে অংশীদার হয়েছি।”
এই অনুদান সরকারের শিক্ষা সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দেয়, যা জাতীয় শিক্ষা নীতি, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। প্রাথমিক শিক্ষায় ভিত্তি শক্ত করতে পাঠদানের মানোন্নয়ন, নির্ধারিত মূল্যায়ন পদ্ধতি ও পুনরুদ্ধারমূলক শিক্ষা কর্মসূচি চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে মৌলিক সাক্ষরতা ও গণনায় ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে।
ইতিমধ্যে ৩৫ হাজারেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী-পুরুষ আলাদা ওয়াশ ব্লক নির্মাণ হয়েছে এবং ৩৪০০ বিদ্যালয় এক শিফটে রূপান্তর করা হয়েছে, যার ফলে শিক্ষার মান ও শ্রেণিকক্ষের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কারিগরি শিক্ষাখাতে বাংলাদেশকে কাঠামোগত সংস্কারে সহায়তা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। একটি জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো (BNQF) নীতিমালা তৈরি হয়েছে এবং গুণগত মান নিরীক্ষা ম্যানুয়াল গ্রহণ করা হয়েছে। এই খাতে বার্ষিক কর্মসম্পাদন প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও জোরদার হয়েছে।
এছাড়াও ১ হাজার ৪৭০ জনের বেশি নতুন প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পেশাগত শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, “এই অনুদান কেবলমাত্র একটি আর্থিক সহায়তা নয়, বরং যৌথ ভবিষ্যৎ গঠনের এক দৃঢ় সংকেত। বাংলাদেশ যদি সবুজ ও ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনে এগিয়ে যায় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, লিঙ্গ-সংবেদনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, তাহলে তা তরুণ প্রজন্মের জন্য আরও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।”
এই অর্থ সহায়তা ইইউ-এর সামগ্রিক প্রতিশ্রুতির অংশ, যার আওতায় প্রাথমিক ও কারিগরি শিক্ষার জন্য মোট ২৪৫ মিলিয়ন ইউরো বাজেট সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইইউ বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে ২১৯ মিলিয়ন ইউরোর বেশি অনুদান দিয়েছে।
এই বিনিয়োগ শিক্ষা খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন এনে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করছে।