Tuesday, July 22, 2025
Homeআন্তর্জাতিকজাতিসংঘের রিপোর্টে রুয়ান্ডা ও উগান্ডার বিরুদ্ধে কঙ্গো সংকট ঘনীভূত করার অভিযোগ

জাতিসংঘের রিপোর্টে রুয়ান্ডা ও উগান্ডার বিরুদ্ধে কঙ্গো সংকট ঘনীভূত করার অভিযোগ

রুয়ান্ডার 'নিয়ন্ত্রণে' এম২৩ বিদ্রোহীরা, উগান্ডার একতরফা সেনা মোতায়েন; বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে চলেছে মানবাধিকার লঙ্ঘন

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের একটি ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে রুয়ান্ডা ও উগান্ডার বিরুদ্ধে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে চলমান সশস্ত্র সংঘাতে সক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রুয়ান্ডা এম২৩ বিদ্রোহীদের “নিয়ন্ত্রণ ও দিকনির্দেশনা” দিচ্ছে এবং উগান্ডা কঙ্গোতে একতরফাভাবে সেনা সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে।

আল জাজিরার হাতে আসা প্রতিবেদনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত না হলেও, এটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মে মাসে জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এম২৩ বিদ্রোহীরা রুয়ান্ডার সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। এদের মাধ্যমে কঙ্গোর অভ্যন্তরীণ অঞ্চল দখল ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট চালানো হয়েছে।

রুয়ান্ডা এম২৩-কে সমর্থন করার অভিযোগ অস্বীকার করলেও জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুয়ান্ডা সরাসরি এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রমের দায় বহন করে।

অন্যদিকে, উগান্ডা পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (UPDF) চলতি বছর কঙ্গোর উত্তর কিভু ও ইতুরি প্রদেশে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কঙ্গো সরকার বলছে, এই মোতায়েন তাদের পূর্বানুমতি ছাড়াই হয়েছে এবং যৌথ অভিযানের বাইরে একতরফা কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত।

প্রতিবেদন আরও জানিয়েছে, এম২৩ দখলকৃত এলাকা থেকে কোল্টানসহ মূল্যবান খনিজ লুটপাট করে রুয়ান্ডায় পাচার করা হয়েছে এবং স্থানীয় উৎপাদনের সাথে মিশিয়ে বৈধ রপ্তানি হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।

রুয়ান্ডা ও উগান্ডা দুই দেশই জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ দলকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছে। রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই রিপোর্টগুলো আগে থেকেই নির্ধারিত ধারণা নিয়ে লেখা হয়।”

উগান্ডার সেনাপ্রধান জেনারেল মুউহোজি কাইনেরুগাবা বলেছেন, “আমরা মানবজীবন রক্ষায় কাজ করছি, আর তারা আমাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক রিপোর্ট তৈরি করছে।”

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঙ্গোর সরকারও এই সংকটে দায়মুক্ত নয়। তারা অব্যাহতভাবে Wazalendo এবং FDLR-এর মতো অনিয়মিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর নির্ভর করছে, যার ফলে সংঘর্ষ আরও ঘনীভূত হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, Goma ও Bukavu শহরগুলোতে এম২৩-এর দখলকালে এবং কঙ্গো সেনাবাহিনীর পিছু হটার সময় বড় ধরনের লুটপাট, যৌন সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

কঙ্গোর সরকারকে এসব অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও আল জাজিরা কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি।

রুয়ান্ডার বিশ্লেষক থিয়েরি গাতেতে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে কঙ্গোর নাগরিক সমাজের গবেষক স্টুয়ার্ট মুহিনডো বলেছেন, এই রিপোর্ট রাষ্ট্র ও অরাষ্ট্রীয় উভয় পক্ষের জবাবদিহির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, “জাতিসংঘ প্যানেল কঠিন সত্য তুলে ধরে।”

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এম২৩ ও অন্যান্য গোষ্ঠীর মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা, বেসামরিক জনগণের উপর সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এখন আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এই অঞ্চলে চলমান সংঘাতের ভবিষ্যৎ গতিপথের দিকে।

RELATED NEWS

Latest News