Sunday, July 20, 2025
Homeআন্তর্জাতিকভারতের বিমান নিরাপত্তা তদারকিতে সংকট, DGCA-র অর্ধেক টেকনিক্যাল পদ শূন্য

ভারতের বিমান নিরাপত্তা তদারকিতে সংকট, DGCA-র অর্ধেক টেকনিক্যাল পদ শূন্য

বিমান চলাচল তদারক থেকে নিরাপত্তা নিরীক্ষা—সব ক্ষেত্রেই সংকট, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উঠল DGCA-র দুর্বলতার চিত্র

ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA)-এ প্রায় অর্ধেক টেকনিক্যাল পদই শূন্য রয়েছে। ১০৬৩টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৫৫৩ জন কর্মী দিয়ে চলছে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল বিমান চলাচল বাজারের তদারকি।

এই সংকটপূর্ণ বাস্তবতা প্রকাশ পায় একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে, যা সম্প্রতি একটি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। জুনে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১ দুর্ঘটনায় ২৬০ জনের মৃত্যুর পর দেশের বিমান নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ঠিক তখনই এই সংকট প্রকট হয়েছে।

DGCA-র কারিগরি বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্লাইট অপারেশন ইনস্পেক্টর, এয়ারওয়ার্থিনেস অফিসার, এয়ার সেফটি অফিসার এবং এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। এসব পদের মাধ্যমে বিমানের নিরাপত্তা, লাইসেন্সিং ও ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রেই চরম মানবসম্পদ ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে, ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (DDG) পদে ১৮টির সব কটিই শূন্য—অনেকটি পদ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে খালি। এতে শুধু বর্তমান কার্যক্রম নয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের ধারাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ DDG হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়া কাউকে জয়েন্ট ডিরেক্টর জেনারেল (JDG) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায় না।

একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা বলেন, “এই ঘাটতির ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তো আছেই, কার্যকারিতাও ব্যাহত হচ্ছে। এটি যেন দিল্লি পুলিশে সব ডেপুটি কমিশনার তুলে দিয়ে শুধুই কমিশনার ও ইনস্পেক্টর দিয়ে কাজ চালানোর মতো অবস্থা।”

অপর এক প্রাক্তন আমলা বলেন, “DGCA-এর কার্যক্রম শুধু বিমানের উড্ডয়ন নয়, পুরো বিমান খাতের নীতিমালা প্রণয়ন, অনাপত্তি সনদ প্রদান, ফ্লাইট প্রশিক্ষণ তদারকি পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ সংস্থাটি চরম জনবল সংকটে ভুগছে।”

নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধীর গতি এবং বাজেট ঘাটতি এই সংকটের অন্যতম কারণ। ২০২২ সালে ৪০০টি নতুন পদ অনুমোদন পেলেও এখনো তা পূরণ হয়নি। বর্তমানে DGCA কিছু চুক্তিভিত্তিক পরামর্শক ব্যবহার করছে, তবে তা প্রয়োজনীয় সংখ্যার অনেক কম।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে DGCA-র স্বাতন্ত্র্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বর্তমানে সংস্থাটি বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে কাজ করে। ফলে তার অর্থনৈতিক ও জনবল নিয়োগের ক্ষমতা সীমিত।

তুলনায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের FAA ৪৬ হাজারের বেশি কর্মী নিয়ে কাজ করে, যদিও এর মধ্যে ১৪ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার। যুক্তরাজ্যের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (CAA) এবং ইউরোপীয় EASA-র রয়েছে যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন।

প্রাক্তন জয়েন্ট ডিরেক্টর জেনারেল জে এস রাওয়াত বলেন, “বর্তমানে ভারতের বিমান চলাচল যেভাবে বাড়ছে, তাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার জনবল ও দক্ষতা বৃদ্ধিই একমাত্র পথ। না হলে লাইসেন্স প্রদান, নিরীক্ষা বা নিরাপত্তা যাচাইয়ে দেরি ঘটবে, যা পুরো খাতের ওপর প্রভাব ফেলবে।”

বর্তমানে ভারতের স্থান আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন সংস্থা (ICAO)-র নিরাপত্তা র‌্যাংকিংয়ে ৪৮তম, যা ২০১৮ সালে ১০২তম ছিল। এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে DGCA-র কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করাই এখন সময়ের দাবি।

একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, “স্বায়ত্তশাসনের পাশাপাশি DGCA-র জন্য ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত পরিকল্পনা দরকার। নয়তো ভবিষ্যতের বিমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।”

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • ভারত

RELATED NEWS

Latest News