যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চম বারের মতো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা ভেস্তে গেছে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে। শনিবার দিল্লির আলোচক দল দেশ ফিরেছে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছাড়াই। এই আলোচনার ব্যর্থতা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আগামী ১ আগস্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্ক আরোপের সময়সীমা ঘনিয়ে এসেছে।
চার দিনব্যাপী আলোচনায় নেতৃত্ব দেন ভারতের প্রধান আলোচক রাজেশ আগরওয়াল। তবে কৃষি, অটোমোবাইল ও সাম্প্রতিক সংযোজিত ডিজিটাল বাণিজ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্য দূর হয়নি। মার্চ থেকে এইসব ইস্যুতে অচলাবস্থা চলছেই, যার ফলে আলোচনার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
বিষয়টি জানেন এমন একজন জানান, ভারত এখনো একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে নির্ধারিত সময়সীমার চাপের মুখে দেশ তার মূল অবস্থান থেকে সরে আসবে না। “আমরা কোনো পক্ষপাতদুষ্ট চুক্তি চাই না। একটি দীর্ঘমেয়াদী, ভারসাম্যপূর্ণ ও কৌশলগত সুবিধাজনক সমঝোতা দরকার,” বলেন ওই কর্মকর্তা।
আলোচনা দুইটি আনুষ্ঠানিক কাঠামোর ভিত্তিতে হয়েছে—একটি ১৩ ফেব্রুয়ারির যৌথ বিবৃতি যা ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা দেয় এবং অপরটি ২১ এপ্রিল মার্কিন উপ-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্সের ভারত সফরে নির্ধারিত টার্মস অব রেফারেন্স।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, আলোচকরা কোনো রাজনৈতিক হুমকির চাপে এসে তাদের ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আলোচনার “সেরা সম্ভাব্য ফল” হতে পারে একটি সাময়িক পণ্যভিত্তিক চুক্তি, তবে তাতেও কোনো একতরফা সুবিধা গ্রহণ করা হবে না, যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে করেছে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকেও চাপ বাড়িয়েছেন, যেখানে ৩০% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যদি ১ আগস্টের আগে কোনো সমঝোতা না হয়। ফলে ভারতের ওপরও একই চাপ পড়ছে, যদিও এখনো সরাসরি কোনো ‘আল্টিমেটাম লেটার’ পাঠানো হয়নি।
আলোচনায় মার্কিন পক্ষ বারবার জেনেটিকালি মডিফায়েড কৃষিপণ্য, ডিউটি-মুক্ত অটোমোবাইল প্রবেশাধিকার এবং ভারতের স্টিল ও অটো পার্টসের ওপর চাপানো শুল্ক নিয়ে আপত্তি তোলে। ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে কৃষি ও দুগ্ধখাত জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত, এবং তা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে সুরক্ষিত থাকা দরকার।
একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই না যে কোনো অন্তর্বর্তী চুক্তিকে ভবিষ্যতের বাধ্যবাধকতা হিসেবে ধরা হোক। প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরে দুই পক্ষ যে কাঠামোর ভিত্তিতে চুক্তির প্রথম ধাপ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার কথা বলেছিল, সেটাই মূল রূপরেখা।”
চলমান চাপের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর ওপরও ১০% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। যদিও ভারত এখনো এমন চিঠি পায়নি, তবুও সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনার পরিণতি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এই আলোচনার অচলাবস্থা বহাল থাকলে, ১ আগস্টের পর ভারতের রপ্তানির ওপর উচ্চ শুল্ক বসানো হতে পারে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।