পহেলগাম হামলা, বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত দাবিকে সামনে রেখে বর্ষা অধিবেশনে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে একত্রে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ২৪টি দল।
শনিবার সন্ধ্যায় অনলাইন বৈঠকে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, রাকাপা (শরদপন্থী), শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী), সমাজবাদী পার্টি সহ বিরোধী দলগুলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি জবাব দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
কংগ্রেসের রাজ্যসভার উপনেতা প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, “পহেলগামে সন্ত্রাসীরা আমাদের বোনদের সিঁদুর মুছে দিয়েছে, অথচ অপরাধীরা এখনো অধরা। এটি একটি গুরুতর গোয়েন্দা ব্যর্থতা।”
বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল বিহারে শুরু হওয়া ভোটার তালিকা বিশেষ সংশোধন (SIR) কর্মসূচি। বিরোধীরা একে “ভোটবন্দি” হিসেবে উল্লেখ করে দাবি করেছে, এটি জনগণের ভোটাধিকার হরণের অপচেষ্টা। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এই বিষয়ে একটি বিশাল সমাবেশের প্রস্তাব দেন, যা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
বৈঠকে অংশ না নিলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন ও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের অনুপস্থিতি কিছুটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে নেতারা জানান, শিগগিরই একটি সরাসরি বৈঠকের আয়োজন করা হবে।
আলোচনার এক পর্যায়ে সিপিআই নেতা ডি রাজা পরোক্ষভাবে রাহুল গান্ধীর এক বক্তব্যের সমালোচনা করেন, যেখানে তিনি আরএসএস ও বাম দলগুলোকে একই পাল্লায় তুলেছিলেন। রাজা বলেন, “আমরা সবাই বিজেপি ও আরএসএসের বিরুদ্ধে লড়ছি, নিজেদের মধ্যে শিষ্টাচার থাকা উচিত।”
সামগ্রিক কৌশলের মধ্যে রয়েছে সংসদে সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশ ও ১৪০ কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলা ইস্যুতে সরব হওয়া। গাজা পরিস্থিতি ও ভারত-চীন সম্পর্ক নিয়ে বিদেশনীতির দিকেও দৃষ্টি রাখার কথা বলেন নেতারা।
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ পহেলগাম হামলার সঙ্গে রাজ্যের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার সম্পর্ক টেনে আনেন। অন্যদিকে উদ্ধব ঠাকরে প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করে নিরাপদে পালিয়ে যায়।
তৃণমূল নেতা অভিষেক ব্যানার্জি বলেন, “বিজেপি একদিকে ইডি ও সিবিআই দিয়ে বিরোধীদের দমন করছে, অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।”
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আলোচনার সূচনা করেন পহেলগাম, অপারেশন সিন্দুর ও ভোটার তালিকা সংশোধনের ইস্যু তুলে ধরে। রাহুল গান্ধী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না, তারা সত্য গোপন করতে চাইছে।”
‘ইন্ডিয়া’ জোটের ৩৪টি দলের মধ্যে সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব থাকা ২৪টি দল এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করে। উপস্থিত দলগুলোর মধ্যে ছিল কংগ্রেস, ডিএমকে, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, এনসিপি (এসপি), শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী), সিপিএম, সিপিআই, জেএনকেসি, পিডিপি, সিপিআইএমএল, জেএমএম, আইইউএমএল, কেসি(এম), এমডিএমকে, ভিসিকে, আরএসপি, কেসি(জে), কেএমডিকে, এআইএফবি, এমএমকে, পিডব্লিউপি ও আরএলপি।
সংসদের আসন্ন অধিবেশনে এক কণ্ঠে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করতে চায় বিরোধীরা।