Friday, September 26, 2025
Homeরাজনীতিবান্দরবানে এনসিপির সমাবেশে নতুন সংবিধানের দাবি ও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান

বান্দরবানে এনসিপির সমাবেশে নতুন সংবিধানের দাবি ও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান

সংবিধানে সমঅধিকার নিশ্চিত না করার অভিযোগ এনসিপির, সহিংস পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে কর্মসূচি বাতিল

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শনিবার বান্দরবানে প্রথমবারের মতো জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ও নতুন সংবিধানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে।

রাত সাড়ে আটটার পর বান্দরবান শহরের সোনালী ব্যাংক এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে বহু জাতিগোষ্ঠী বাস করলেও সংবিধানে সকলের সমান স্বীকৃতি নেই।”

তিনি আরও বলেন, “মুজিববাদ নানা ভাবে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশ পথ অনুযায়ী দেশ পুনর্গঠনের।”

জেলার দলীয় ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক মো. শাহিদুর রহমান সোহেল সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে সংকটাপন্ন। রাজনৈতিক দলগুলো শুধু তাদের নিজস্ব কর্মীদের জন্য সুবিধা তৈরি করছে, অথচ সাধারণ জনগণ বঞ্চিত থাকছে।

আরও পড়ুন: সালাহউদ্দিনকে ঘিরে মন্তব্যে উত্তপ্ত কক্সবাজার, এনসিপির সমাবেশে বাধা বিএনপির

দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, “১৯৭২ সালের পর জাতিগোষ্ঠীগুলোর স্বতন্ত্র পরিচয় মুছে দিয়ে তাদের বাঙালি পরিচয় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “পাহাড়ি অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এসব রোধে জাতীয় ঐক্য ও সব জনগোষ্ঠীর মর্যাদা নিশ্চিত করা জরুরি।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামন্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সম্পাদক নাহিদা সারওয়ার নিবা, ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি এবং আঞ্চলিক সুপারভাইজার ইমান সাইদ।

এ সময় বান্দরবানের সাতটি উপজেলা থেকে শত শত নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। নিরাপত্তার স্বার্থে জেলা শহরজুড়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এদিকে, একইদিন কক্সবাজারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ঘিরে এনসিপি নেতা নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীর বক্তব্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

সোহরাওয়ার্দী গ্রন্থাগারের মাঠে এনসিপির এক সমাবেশে সালাহউদ্দিনকে ইঙ্গিত করে নাসিরউদ্দিন বলেন, “আগে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ছিলেন গডফাদার। এখন শুনছি শিলং থেকে নতুন গডফাদার এসেছেন কক্সবাজারে।”

আরও পড়ুন | মুন্সিগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা, নতুন বাংলাদেশের দাবিতে সরব নেতারা

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “জমি দখল, চাঁদাবাজি চলছে — কক্সবাজারবাসী আর সহ্য করবে না। সংস্কার বিরোধীদের রাস্তায় প্রতিহত করা হবে।”

এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা সমাবেশস্থল ভাঙচুর করে এবং শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। একই সঙ্গে চকরিয়া, রামু ও ঈদগাঁওতে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে।

অবশেষে চকরিয়ায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

বিপত্তির কারণে কক্সবাজারে এনসিপির সকল কর্মসূচি বাতিল করা হয় এবং নিরাপত্তার স্বার্থে দলীয় নেতাদের মোটরকেড সেনা প্রহরায় জেলা ত্যাগ করতে হয়। নেতারা বর্তমানে বান্দরবান অভিমুখে রয়েছেন।

এনসিপি মনে করছে, বান্দরবানের সমাবেশে জাতীয় নেতাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই অঞ্চলে দলটির অবস্থান আরও দৃঢ় হবে। তবে কক্সবাজারে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

RELATED NEWS

Latest News