বিশ্বের আম উৎপাদনে সপ্তম স্থানে থাকা বাংলাদেশ রপ্তানির দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। তবে এই অবস্থান পাল্টাতে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে কাতার হয়ে উঠতে পারে সম্ভাবনাময় গন্তব্য। সেই লক্ষ্যেই দোহায় আয়োজিত হচ্ছে প্রথম বাংলাদেশি ফল মেলা।
বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ২৫ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে দোহার অন্যতম বাণিজ্য এলাকা শুক ওয়াকিফে। মেলায় অংশ নিচ্ছে প্রায় ৬০টি স্টল। আয়োজকদের প্রত্যাশা, মেলায় ৫ লাখ কেজি ফল বিক্রি সম্ভব হবে।
মেলায় বাংলাদেশের বোম্বাই লিচু, নানা প্রজাতির আম, কাঁঠাল, জাম এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য রাখা হবে। অংশ নিতে পারছেন দেশের কৃষক, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। অংশগ্রহণকারীদের পাশে রয়েছে এম্পিরিক রিসার্স লিমিটেড, যারা সহযোগী হিসেবে মেলা আয়োজন করছে।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সোহেল রানা জানান, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো যাতে বাংলাদেশের উৎপাদনকারীরা কম খরচে অংশ নিতে পারে। এই মেলার মাধ্যমে কাতারে কৃষিপণ্য রপ্তানির নতুন দ্বার খুলে যাবে।”
বর্তমানে কাতারে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ফলের বাজার রয়েছে, যা মূলত ভারত ও পাকিস্তানের দখলে। তবে বাংলাদেশি ফলের স্বাদ ও গুণমান বাজারে প্রবেশ করতে পারলে কাতার থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী তাজা ফলের বাজার হবে ৭৭৮ বিলিয়ন ডলার। শুধু আমের বাজারই ২০২৪ সালে ছিল ৬৭.৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৯ সালে বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৯৮ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার আমের বাজার রয়েছে এবং শতাধিক প্রজাতির আমের মধ্যে ৪৫টি এখনও চাষ হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত, ফজলি, ল্যাংড়া ও রাজশাহীর হাঁড়িভাঙ্গাসহ কয়েকটি জাত ইতিমধ্যেই জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে, যা রপ্তানিতে বাড়তি সুবিধা দেবে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য, হংকং, কানাডা, বাহরাইন, সুইজারল্যান্ড, ইতালি ও সুইডেনে বাংলাদেশি আম রপ্তানি হচ্ছে। তবে কাতার ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্য দেশ এখন নতুন করে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে।
এই ফল মেলা শুধু রপ্তানির সুযোগ নয়, বরং কৃষিপণ্যে দেশের ব্র্যান্ডিংয়েরও একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক মান বজায় রেখে ও সনদায়ন প্রক্রিয়া শক্তিশালী করে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ফলের অবস্থান আরও দৃঢ় করা সম্ভব।