পাহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)-কে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শুক্রবার এই পদক্ষেপকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতার দৃঢ় বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জয়শঙ্কর এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, “ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতার এক দৃঢ় স্বীকৃতি। TRF—যা লস্কর-ই-তৈয়বার (LeT) একটি ছদ্মবেশী সংগঠন—কে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ও বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করায় মার্কো রুবিও ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে ধন্যবাদ। পাহেলগাঁও হামলার দায় তারা স্বীকার করেছে। সন্ত্রাসের জন্য সহনশীলতা শূন্য।”
TRF গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে একটি সন্ত্রাসী হামলা চালায়, যাতে ২৬ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “TRF–কে FTO এবং SDGT তালিকাভুক্ত করায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। TRF হচ্ছে LeT–র একটি ছদ্মবেশী সংগঠন এবং তারা পাহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে। সন্ত্রাসবাদে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—জিরো টলারেন্স।”
TRF-কে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেটি আগেই জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত।
মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও বলেন, “TRF হচ্ছে LeT–র সামনের মুখ ও ছদ্মবেশী শাখা। তাদের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতি এবং পাহেলগাঁও হামলার বিচার নিশ্চিতে অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ।”
এর আগে এক বিবৃতিতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, TRF শুধু ২২ এপ্রিলের হামলাই নয়, গত এক বছরে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর একাধিক আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “TRF–কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো। এটি LeT–র ছদ্ম সংগঠন এবং ২২ এপ্রিল পাহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে, যেখানে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এটি ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর ভারতের বেসামরিক জনগণের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ।”
ভারত চালায় ‘অপারেশন সিন্দুর’
হামলার পর ভারত ৭ মে চালায় ‘অপারেশন সিন্দুর’। এই পাল্টা অভিযানে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়।
ভারতীয় নিরাপত্তা সূত্র জানায়, এই অভিযানে ১০০’র বেশি সন্ত্রাসী নিহত হন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতীয় ভূখণ্ডে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা চালায়।
ভারত তৎক্ষণাৎ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং নির্ভুল পাল্টা আঘাত হানে, যার পরিণতিতে ১০ মে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায়।
এই ঘটনার পরে কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারত ৩৩টি দেশের রাজধানীতে সাতটি বহুদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠায়, যার মধ্যে ছিল ওয়াশিংটন ডিসিও। উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের প্রতি মদদ তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরদার করা।
বিশ্লেষকদের মতে, TRF–কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা শুধু ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককেই মজবুত করছে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও আন্তর্জাতিক মনোযোগ ফেরাতে সাহায্য করছে।