Friday, July 18, 2025
Homeজাতীয়জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ওরিয়েন্টেশনে শিক্ষার্থীর কবিতা পাঠ নিয়ে বিতর্ক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ওরিয়েন্টেশনে শিক্ষার্থীর কবিতা পাঠ নিয়ে বিতর্ক

আল মাহমুদের কবিতা পরিবর্তন করে পাঠ করায় সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ইসলামী ছাত্র শিবিরের একটি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জয়নব হাসান অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কবি আল মাহমুদের “আমাদের মিছিল” কবিতা থেকে একটি পরিবর্তিত পংক্তি আবৃত্তি করেন।

মূল কবিতার “শয়তান আমাদের দেখে ভয়ে অন্ধকারে পালায়” পংক্তির পরিবর্তে তিনি বলেন, “শয়তান আমাদের দেখে দিল্লিতে পালায়।”

তার এমন পরিবেশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে করতালি ও উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে।

জয়নব হাসান তার বক্তব্যে বলেন, “আজকে এখানে আসার সবচেয়ে বড় কারণ ড. মির্জা গালিব ভাই। আমি উনাকে খুব কাছ থেকে অনুসরণ করি। উনি বলছিলেন, আমাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে—আমি একদম একমত। গালিব ভাইয়ের সঙ্গে মঞ্চে থাকতে পারাটাই আমার জন্য সম্মানের।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। আরও বক্তব্য রাখেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ বিলাল হোসাইন এবং জবি শিবির সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম।

ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে আগত প্রায় দুই হাজার নবীন শিক্ষার্থীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয় এবং তাদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়।

তবে শিক্ষার্থীর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয় আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকেই পংক্তি পরিবর্তনকে ‘অপব্যাখ্যা’ হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ এটিকে ‘রাজনৈতিক বার্তা’ বলেও মন্তব্য করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য না করলেও বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে।

বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন হলেও ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য রচনাকে পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা উচিত নয়। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল বার্তা দিতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একজন শিক্ষার্থী যদি সাহিত্যকে রাজনৈতিক বার্তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তবে সেটি বিতর্ক তৈরি করবেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে আরও সচেতন থাকতে হবে।”

সামাজিক মাধ্যমেও পোস্ট, মন্তব্য এবং বিতর্কের ঝড় চলছে—কেউ শিক্ষার্থীর সাহসের প্রশংসা করছেন, কেউবা বলছেন একাডেমিক অনুষ্ঠানে এমন বক্তব্য অনুচিত।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও সামনে এসেছে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা, মতপ্রকাশের সীমারেখা ও সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গি ঘিরে বহুমাত্রিক প্রশ্ন।

RELATED NEWS

Latest News