২০২৭ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে চালু হতে যাচ্ছে নতুন জাতীয় পাঠ্যক্রম। প্রথম ধাপে এটি শুরু হবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এবং ধাপে ধাপে উচ্চ শ্রেণিগুলোতে সম্প্রসারিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত শিক্ষাআন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নতুন পাঠ্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে মুখস্থভিত্তিক শিক্ষা থেকে সরে এসে হাতে-কলমে, ব্যবহারিক শিক্ষার দিকে অগ্রসর হওয়া। এটি শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ ও ভবিষ্যত উপযোগী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “এই পাঠ্যক্রম জাতীয় সংলাপ ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে। এতে প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তি ও জবাবদিহিতার উপর জোর দেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, দেশপ্রেম, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মূল জাতীয় মূল্যবোধ নতুন পাঠ্যক্রমে অটুট থাকবে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের শিক্ষাআন্দোলন এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটও পাঠ্যক্রম কাঠামোকে প্রভাবিত করবে।
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী জানান, ২০২৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ২০১২ সালের বিদ্যমান পাঠ্যক্রমেই পরীক্ষা দেবে। এর ভিত্তিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে।
নতুন পাঠ্যক্রমে ২০১২ ও ২০২২ সালের পাঠ্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে কোনটি ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
প্রাথমিক স্তরে বর্তমানে ২০২২ সালের পাঠ্যক্রম চালু রয়েছে এবং সে অনুযায়ী নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত করা হচ্ছে।
১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয়টির বেশি শিক্ষা কমিশন নানা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে কুদরাত-ই-খুদা কমিশন (১৯৭২), শামসুল হক কমিটি (১৯৭৬), কাজী জাফর আহমদ কমিশন (১৯৭৮) এবং কবীর চৌধুরী কমিশন (২০০৯) উল্লেখযোগ্য।
২০২১ সালের পাঠ্যক্রমটি আওয়ামী লীগের শিক্ষানীতির অংশ হিসেবে চালু হলেও তা দ্রুত বাস্তবায়নের কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে। শিক্ষক-অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদদের মতে, এতে শিক্ষার্থীদের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের একজন অভিভাবক আনিসুর রহমান বলেন, “আমরা এমন পদ্ধতি চাই না যা শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে। সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে মূল্যায়নের পদ্ধতি কী হবে।”
মিরপুরের অভিভাবক ফারহানা নাসরিন বলেন, “যদি শিক্ষকরা সঠিক প্রশিক্ষণ না পান, তবে ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন শিক্ষার উন্নতির পরিবর্তে দুশ্চিন্তা বাড়াবে।”
এনসিটিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৬টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্লেষণ করে এই পাঠ্যক্রম তৈরি করা হচ্ছে।