ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের তিন মাস পার হতেই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ পাওয়া বিশ্ব নেতাদের জন্য যেন এখন সম্মানের চেয়ে চ্যালেঞ্জ বেশি হয়ে উঠছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে ওভাল অফিসে হওয়া বৈঠকটি ছিল এরই একটি বহুল আলোচিত উদাহরণ।
বৈঠকটি শুরু হয় স্বাভাবিক আলাপচারিতায়, কিন্তু খুব শিগগিরই তা রূপ নেয় পরিকল্পিত এক অপমানজনক পরিবেশে। আলো নিভিয়ে বড় স্ক্রিনে ভিডিও চালানো, পুরনো খবরের কাটিং তুলে ধরা এবং সাংবাদিকদের উস্কানিমূলক প্রশ্নে তৈরি হয় এক ধরনের নাটকীয় পরিবেশ।
এক সাংবাদিক দক্ষিণ আফ্রিকায় তথাকথিত ‘হোয়াইট জেনোসাইড’ নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রেসিডেন্ট রামাফোসা উত্তরে বলেন, ‘ট্রাম্পকে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের কথা শুনতে হবে।’ তখনই ট্রাম্প নির্দেশ দেন আলো নিভিয়ে ভিডিও চালাতে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে ভিডিও, ছবি এবং বিতর্কিত গান প্রদর্শন করেন। যদিও অনেক তথ্যই বিতর্কিত বা ভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত।
ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেছেন, পুরো বৈঠকে নীরব দর্শক ছিলেন। বৈঠকে আরও ছিলেন দুই বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান গলফার এবং একজন কৃষিমন্ত্রী, যিনি বর্তমানে জাতীয় ঐক্য সরকারে রয়েছেন।
রামাফোসা শ্বেতাঙ্গবিরোধী অভিযানের সব অভিযোগের বিরুদ্ধে ঠাণ্ডা মাথায় যুক্তি তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘যদি সত্যিই শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা চলতো, তাহলে তারা এখানে থাকতেন না।’
যদিও ট্রাম্প প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যান, তবুও রামাফোসা নিজের অবস্থান ধরে রাখেন।
এই কূটনৈতিক ঘটনাটি শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ মিশনের অন্যতম কৌশল হলো বিদেশি ইস্যু ব্যবহার করে দেশের জনগণের আবেগ জাগিয়ে তোলা।
তবে এবার রামাফোসার সংযত কূটনীতি এবং প্রস্তুত অবস্থান ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে পুরোপুরি সফল হতে দেয়নি। এতে বোঝা যায়, ওভাল অফিসে আলোচনায় আসা অনেক নেতাই এখন নতুন কৌশলে প্রস্তুত হচ্ছেন। ট্রাম্পকে প্রভাব ধরে রাখতে তাই ভবিষ্যতে কৌশলে পরিবর্তন আনতেই হতে পারে।