সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা প্রদেশ থেকে সরকার বাহিনী সম্পূর্ণরূপে সেনা প্রত্যাহার করেছে। সাম্প্রতিক কয়েকদিনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ এক টেলিভিশন ভাষণে জানান, “সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে সুইদার নিরাপত্তার দায়িত্ব স্থানীয় ধর্মীয় নেতা এবং কয়েকটি আঞ্চলিক গোষ্ঠীর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর প্রধান রামি আবদেল রহমান জানান, “সরকারি বাহিনী সুইদা শহর এবং সমগ্র প্রদেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে। এখন ওই এলাকায় ড্রুজ যোদ্ধারা মোতায়েন রয়েছেন।”
সরকারি সেনাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বুধবার রাত ৯টার দিকে তাদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং বৃহস্পতিবার ভোরেই তারা এলাকা ছেড়ে চলে যায়।
রবিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৭০ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ৭৯ জন ড্রুজ যোদ্ধা, ৫৫ জন বেসামরিক নাগরিক (যাদের মধ্যে ২৭ জনকে দ্রুত বিচারবিহীনভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে), ১৮৯ জন প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্য এবং ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধা।
সুইদা ২৪ নিউজ ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক রায়ান মারুফ বলেন, “সুইদা শহরে এখন আর কোনো সরকারি বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না।”
প্রথমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি বাহিনী ড্রুজ যোদ্ধা ও সাধারণ জনগণের ওপর বেদুইনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে হামলা চালিয়েছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ বৃহস্পতিবার আবারও প্রতিশ্রুতি দেন, ড্রুজ জনগণের ওপর সহিংসতায় যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, “ড্রুজ জনগণ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও দায়িত্বের আওতায় রয়েছে এবং যারা তাদের ওপর হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিবেশী ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক সদরদপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চল থেকে সিরিয়ার ইসলামপন্থী সরকারের বাহিনী পুরোপুরি না সরানো পর্যন্ত হামলা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ার ড্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষায় ইসরায়েল বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ ড্রুজ নাগরিক রয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসলামপন্থী সরকার কর্তৃক বাশার আল-আসাদকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই সিরিয়ায় নতুন নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েল গভীর সন্দেহে রয়েছে।
নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ হায়াত তাহরির আল-শাম আন্দোলনের নেতা ছিলেন, যা একসময় আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এই বাস্তবতায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।