জাতিসংঘ মঙ্গলবার জানিয়েছে, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের গণচ্যুতি এমন মাত্রায় পৌঁছেছে, যা ৬০ বছরের ইসরায়েলি দখলের ইতিহাসে এর আগে দেখা যায়নি। সংস্থাটি ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে এই বিপর্যয়ের আশঙ্কাজনক মাত্রার চিত্র তুলে ধরেছে এবং এটিকে সম্ভাব্য “জাতিগত নির্মূল” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র জুলিয়েট তৌমা বলেন, জানুয়ারি থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের উত্তরে যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তা দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান। “এই অভিযান একাধিক শরণার্থী শিবিরকে প্রভাবিত করেছে এবং ১৯৬৭ সালের পর এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সৃষ্টি করেছে,” মঙ্গলবার জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র থামিন আল-খীতান জানান, অভিযানের অংশ হিসেবে প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, একই সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে প্রায় ১,৪০০ ঘরবাড়ি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি এ সংখ্যাকে “উদ্বেগজনক” হিসেবে অভিহিত করেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীরজুড়ে ২,৯০৭ ফিলিস্তিনি শুধু ইসরায়েলি ভাঙচুরের কারণে ঘরছাড়া হয়েছেন। এর পাশাপাশি আরও ২,৪০০ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিশু, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
আল-খীতান বলেন, “এই দুই প্রক্রিয়া মিলিয়ে পশ্চিম তীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ফিলিস্তিনি জনমানবশূন্য হয়ে পড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “অধিকৃত অঞ্চলে সাধারণ জনগণকে স্থায়ীভাবে চ্যুতি করা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ স্থানান্তরের শামিল। এটি পরিস্থিতিভেদে জাতিগত নির্মূল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।”
চলতি বছরের প্রথমার্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা ৭৫৭টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। শুধু জুন মাসেই ৯৬ জন ফিলিস্তিনি আহত হন, যা গত দুই দশকে বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় সবচেয়ে বেশি আহত হওয়ার রেকর্ড।
জাতিসংঘ আরও জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে অন্তত ৯৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই বাস্তুচ্যুতি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তাহীনতা, সংকট ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে গড়াবে।