ভারতে চলমান মৌসুমি বৃষ্টিপাতে দেশের একাধিক রাজ্যে তৈরি হয়েছে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (IMD) ঝাড়খণ্ডের জন্য জারি করেছে লাল সতর্কতা এবং হিমাচল প্রদেশের ছয়টি জেলার জন্য দেওয়া হয়েছে কমলা সতর্কতা। একইসঙ্গে দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রদেশে চলবে অবিরাম বৃষ্টি।
ঝাড়খণ্ডের সারাইকেলা-খারসওয়ান, পূর্ব সিংভূম ও পশ্চিম সিংভূম জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। গুমলা, খুঁটি ও সিমডেগা জেলাগুলোর জন্য কমলা সতর্কতা রয়েছে।
এই সতর্কতার প্রেক্ষিতে পূর্ব সিংভূম জেলার সব সরকারি, বেসরকারি ও সংখ্যালঘু স্কুল ১২ শ্রেণি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কর্ণ সত্যার্থির স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাবে যেন পড়াশোনায় বিঘ্ন না ঘটে।
রাঁচি আবহাওয়া কেন্দ্রের উপপরিচালক অভিষেক আনন্দ জানিয়েছেন, রাজ্যজুড়ে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, “সাউথইস্ট গ্যাঙ্গেটিক পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ অঞ্চলে অবস্থানরত নিম্নচাপটি গভীর হয়ে বিষ্ণুপুর অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে।”
রাজধানী দিল্লি এবং আশেপাশের এলাকা যেমন নয়ডা ও গুরগাঁওয়েও শুরু হয়েছে বৃষ্টির দাপট। সোমবার দিল্লির জন্য জারি করা হয়েছিল হলুদ সতর্কতা। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী মঙ্গলবারেও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
হিমাচল প্রদেশে বৃষ্টি-সম্পর্কিত দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। রাজ্যজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ছয়টি জেলার জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শিমলা আবহাওয়া কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী সন্দীপ কুমার শর্মা জানিয়েছেন, “১৪ ও ১৫ জুলাই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষত কাংড়া, মান্ডি এবং সিমরার জেলায় আজ ও আগামীকাল ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।”
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে IMD। দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় বুধবার পর্যন্ত অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রদেশে গড়ের তুলনায় ৭৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ষা সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে ৪৫৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেখানে গড় বৃষ্টির পরিমাণ ২৬০ মিলিমিটার। টিকমগড় জেলায় এই সময়ে রেকর্ড ৮২৮.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
দেশজুড়ে এই অতিবৃষ্টির ফলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাগরিকদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে নদী ও পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য পর্যায়ে জরুরি বৈঠকও চলছে।