সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা প্রদেশে দ্রুজ এবং সুন্নি বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোমবার সেখানে সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে সিরিয়ার প্রশাসন। দীর্ঘ ১৪ বছরের যুদ্ধে বিধ্বস্ত একটি দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এই নতুন ঢেউ গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সুইদা ২৪ জানিয়েছে, রোববার শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ সোমবারও থেমে থেমে চলেছে। সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে সুইদা ও দামেস্ক সংযোগকারী মহাসড়কে এক দ্রুজ সবজি বিক্রেতাকে সশস্ত্র বেদুইনদের দ্বারা অপহরণের মাধ্যমে। পরে পাল্টাপাল্টি অপহরণ শুরু হলে পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে পড়ে।
সোমবার পর্যন্ত সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন দ্রুজ, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১০ জন বেদুইন এবং ছয়জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনও ছয় নিরাপত্তা সদস্যের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই সংঘর্ষে ৩০ জন নিহত এবং প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছেন।
দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রোববার থেকেই এলাকায় সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় সিরিয়ার প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য নিরাপদ করিডোর তৈরির ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস খাত্তাব বলেছেন, “সুইদায় দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা কাঠামোর অনুপস্থিতিই এই অস্থিরতার মূল কারণ। একমাত্র সমাধান হলো এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা পুনরায় চালু করা।”
এর আগেও চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে দ্রুজ-অধ্যুষিত এলাকায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় সংঘর্ষে। তখন স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রাখলেও এই এলাকায় এখনও সশস্ত্র বেদুইনদের উপস্থিতি রয়েছে।
রোববার সুইদার গভর্নর মুস্তাফা আল-বাকুর জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। দ্রুজ সম্প্রদায়ের নেতারাও সরকারের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।
সহিংসতার কারণে সোমবার সুইদা প্রদেশে মাধ্যমিক পরীক্ষাও স্থগিত করেছে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দ্রুজরা মূলত একটি রহস্যময় ধর্মমতের অনুসারী, যারা শিয়া ইসলামের একটি শাখা থেকে উদ্ভূত হলেও বর্তমানে সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলে বসবাস করেন। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের আগে তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ লাখ।
সুইদা অঞ্চলে বেদুইন ও দ্রুজ গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ থাকলেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আবারো উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। এর আগে মার্চ মাসে আলাওয়িত সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় ১৭০০ জনের বেশি নিহত হয়, যার জেরে দ্রুজ অধ্যুষিত এলাকায়ও পাল্টা হামলা শুরু হয়।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল, যা ১৯৬৭ সাল থেকে গোলান মালভূমির একটি অংশ দখলে রেখেছে, নিরাপত্তার নামে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। মে মাসের শুরুতে এমনই এক হামলা হয়েছিল দামেস্কে প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের কাছে।
ইসরায়েলে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার দ্রুজ বসবাস করেন, যাদের মধ্যে ২৪ হাজারই গোলান মালভূমিতে এবং তাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে সুইদায় নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এখন দেশটির পরিস্থিতির দিকে।