জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারী নেত্রী ও সংগঠকরা অংশ নেন।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শহীদ মিনার থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম।
তিনি বলেন, “১৯৭২ সাল থেকে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সংগ্রাম চলছে। আমরা এখনো নিজেদের পরিচয় খুঁজছি। এখনই সময় নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার।” তিনি আরও বলেন, “নারী আন্দোলন শুধুমাত্র নারীর নয়, এটি সমাজের আন্দোলন। সমাজ আমাদের পাশে আছে।”
ড. ফওজিয়া বলেন, “সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবিটি একদিন জনসমর্থন পাবে। কাউকে পেছনে রেখে গণতন্ত্র এগোতে পারে না। তাই এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সরাসরি নির্বাচনের পথই গ্রহণযোগ্য।”
মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, “অনেক নারী রাজনীতিতে এলেও তারা মনোনয়ন নির্ভর ও দলে সীমাবদ্ধ থাকেন। তাদের নিজস্ব মত প্রকাশ বা ভূমিকা রাখার সুযোগ কম। আমরা দাবি জানাই, নারীদের সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে আসার ব্যবস্থা করতে হবে।”
সংগঠনের নেত্রী রাবেয়া খাতুন শান্তি বলেন, “আজকের নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষমতা এসেছে দীর্ঘ নারী আন্দোলনের ফলে। মানবিক সংকট মোকাবেলায় নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো জরুরি।”
প্রশিক্ষণ ও গবেষণা উপ-পরিষদের প্রধান রীনা আহমেদ বলেন, “নারী সহিংসতা ক্রমশ বাড়ছে, অথচ সংসদে থাকা নারী প্রতিনিধিদের অনেকেই কোনো ভূমিকা রাখছেন না। নারীদের সরাসরি নির্বাচনের দাবি সংসদীয় মহিলা কমিশনের মাধ্যমে সরকারকে জানানো হোক।”
ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস বলেন, “পাঁচ দশকের বেশি সময়েও নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। শুধু নির্বাচিত করলেই হবে না, কাজ করার সুযোগও দিতে হবে। নারীদেরই সামনে এসে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ারা বেগম বলেন, “এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ছাড়া নারীর উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
নারী শ্রমিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক শাহিদা পারভিন শিখা বলেন, “এটা পুরুষদের বিরুদ্ধে নয়, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই। নারী ক্ষমতায়ন ছাড়া গণতন্ত্র অসম্পূর্ণ। আমরা মনোনয়ন নয়, সরাসরি নির্বাচনের দাবি করছি।”
সমাবেশে ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন (ক্যাম্পে), কর্মজীবী নারী, নারী শ্রমিক কেন্দ্র এবং ঢাকা, টঙ্গী, বেলাবো ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত নেত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা একমত হয়ে বলেন, নারীর রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি ও কার্যকর অংশগ্রহণের জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।