বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবিধানের মূল নীতিতে জুলাই সনদ অন্তর্ভুক্তির দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে মন্তব্য করেছেন।
শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জিয়া পরিষদ আয়োজিত এক দোয়া ও জায়নামাজ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী বলেন, “বিএনপি ইতোমধ্যেই জুলাই সনদের অনেক দিক গ্রহণ করেছে। তবে এটি সংবিধানের মূলনীতির অংশ হতে হবে, এমন দাবি কেন?”
তিনি বলেন, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি স্থির নয়। সময় ও প্রয়োজনে রাষ্ট্র বা জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনীয় আইন ও সংস্কার হওয়া উচিত। তবে এটি জোর করে সংবিধানে ঢুকিয়ে দেওয়া জনগণকে বিভ্রান্ত করার শামিল।”
রিজভী বলেন, “জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাজনৈতিক দলগুলোকে এই কাজেই মনোযোগী হওয়া উচিত, নানা দাবি তুলে বিভ্রান্তি ছড়ানো নয়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ১৬ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বৈরশাসনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন। “আমাদের সেই বন্ধ দরজা খুলে জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সরকার গঠন করতে হবে।”
সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে রিজভী বলেন, “আমরা কখনো সংস্কারের বিরুদ্ধে বলিনি, বরং বরাবরই সমর্থন করেছি। আমাদের ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাবেই অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই লড়াই ন্যায়বিচার, সাম্য, আইনের শাসন এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। যখন জনগণের রাষ্ট্রীয় মালিকানা কেড়ে নেওয়া হয়, তখনই ফ্যাসিবাদের পথ খুলে যায়।”
বর্তমান সরকারের জবাবদিহিতা নেই বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ছাড়া কোনো সরকার টিকে থাকতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণ এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সমর্থনে গঠিত হয়েছে— শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ এবং তাদের কয়েকজন মিত্র বাদে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে রিজভী বলেন, “তবে যদি দুর্ভিক্ষের লক্ষণ দেখা যায়, জনগণ কাউকে ছাড়বে না।”
অর্থনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনেক গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে। যদি মানুষ খাদ্য কিনতে না পারে, তবে সেটাই দুর্ভিক্ষের লক্ষণ। এই অবস্থায় কেউ রক্ষা পাবে না, শুধু পতিত ফ্যাসিস্টরাই হাততালি দেবে।”
রিজভী বলেন, “যারা বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসিয়ে অন্তত সেই কারখানাগুলো চালু রাখা সরকারের কর্তব্য। দেশের এই সংকটময় সময়ে কারখানা বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না।”
বিএনপি নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর নাগাদ দেশে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। এই বাস্তবতায় সরকারের নীতিগত জবাবদিহিতা ও কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানান তিনি।