যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির উপর বাড়তি শুল্ক আরোপের আশঙ্কায় সরকারের কাছে লবিস্ট নিয়োগসহ সক্রিয় হস্তক্ষেপ চেয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)।
সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্ক পুনর্বিন্যাস আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান জোরালো করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করতে একজন দক্ষ লবিস্ট নিয়োগের অনুরোধ জানানো হবে।
তিনি বলেন, “আমরা সরকারের সহায়তা নিয়ে কার্যকর একটি সমাধান চাই। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।”
৯ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ওয়াশিংটনে ‘Agreement on Reciprocal Tariff’ বিষয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হচ্ছেন।
এর আগেই মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের উপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংস্থা ওটেক্সার (Otexa) তথ্যমতে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৭.৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
এই শুল্ক বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বিগমেয়া সভাপতি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যেসব রপ্তানিকারক শুধুমাত্র মার্কিন বাজারে কাজ করেন, তাদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিকল্প বাজার খুঁজে না পেলে অনেক কারখানা বন্ধ হতে পারে এবং কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।”
তিনি আরও জানান, “যদি প্রতিযোগী দেশগুলোর শুল্ক কম থাকে, তাহলে ক্রেতারা সেইসব দেশে চলে যাবে।”
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিগমেয়ার সাবেক পরিচালক মোহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “শুল্ক হ্রাস ও প্রতিযোগিতামূলক হার বজায় রাখতে অভ্যন্তরীণ ব্যয় ব্যবস্থাপনা, পণ্যের বৈচিত্র্য এবং নতুন বাজারে প্রবেশের ওপর জোর দিতে হবে।”
বিশেষজ্ঞরা জানান, তিন মাস সময় পেলেও বাংলাদেশ মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক হ্রাস করতে পেরেছে, যেখানে ভিয়েতনাম বেশ এগিয়ে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ ফ্ল্যাট শুল্ক নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন শুল্ক বিদ্যমান ১৫-১৬ শতাংশের ওপর যুক্ত হবে, ফলে গড় শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশেরও বেশি।”
এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে নতুন বাধার মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত বছরের হিসেব অনুসারে, বিদ্যমান ১৫.৫ শতাংশ শুল্কে বাংলাদেশকে গুনতে হয়েছে ১.১৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৩.৭১ বিলিয়ন ডলার। অতিরিক্ত অর্থপ্রদান করতে হবে প্রায় ২.৫৭ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চাপে বাংলাদেশ থেকে ক্রয় কমিয়ে দিতে পারে অনেক ক্রেতা এবং অর্ডার চলে যেতে পারে কম খরচে উৎপাদনকারী অন্য উৎসে। তাই সময়মতো লবিস্ট নিয়োগ এবং সরকারের সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ জরুরি হয়ে উঠেছে।