বিশ্বের প্রথম শিশুদের জন্য উপযোগী ম্যালেরিয়ার ওষুধ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে সুইস সরকার। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য তৈরি এই ওষুধটি শিগগিরই আফ্রিকার দেশগুলোতে সরবরাহ শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সুইস ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নভার্টিস এবং সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এই ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে।
২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ম্যালেরিয়ায় প্রায় ৫ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ মারা গেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ মৃত্যু আফ্রিকায় এবং প্রায় ৭৫ শতাংশই পাঁচ বছরের নিচে বয়সী শিশু।
এতদিন পর্যন্ত ছোট শিশুদের জন্য আলাদা কোনো ম্যালেরিয়ার ওষুধ অনুমোদিত ছিল না। তাদের সাধারণত বড় শিশুদের জন্য তৈরি ডোজে চিকিৎসা দেওয়া হতো, যা অতিরিক্ত ডোজের ঝুঁকি তৈরি করত।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যেহেতু নবজাতকদের শরীর ও লিভারের কার্যকারিতা ভিন্নভাবে কাজ করে, তাই বড়দের ডোজ তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে একটি ‘চিকিৎসাগত ফাঁক’ তৈরি হয়েছিল।
এখন ‘কোয়ার্টেম বেবি’ বা কিছু দেশে পরিচিত ‘রিয়ামেট বেবি’ নামে পরিচিত ওষুধটি এই ঘাটতি পূরণে আশার আলো দেখাচ্ছে। ওষুধটি তৈরি হয়েছে ‘মেডিসিনস ফর ম্যালেরিয়া ভেঞ্চার’ (এমএমভি) নামের অলাভজনক সংস্থার সহযোগিতায়, যা প্রথমে ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, বিশ্বব্যাংক এবং রকফেলার ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
নভার্টিসের প্রধান নির্বাহী বাস নারাসিমহান বলেন, “তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। আজ আমরা গর্বিত যে নবজাতক ও ক্ষুদ্র শিশুদের জন্য নিরাপদ ও পরীক্ষিত চিকিৎসা দিতে পেরেছি।”
আটটি আফ্রিকান দেশ এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিয়েছে এবং তারাই প্রথম এটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এমএমভির প্রধান নির্বাহী মার্টিন ফিচেট বলেন, “ম্যালেরিয়া শিশুদের জন্য বিশ্বের অন্যতম মারাত্মক রোগ। তবে সঠিক উদ্যোগ থাকলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোয়ার্টেম বেবি সেই পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারের সহযোগী অধ্যাপক ড. মারভেল ব্রাউন বলেন, “বিশেষ করে সিকল সেল রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য এটি বড় অর্জন। এই ওষুধটি নবজাতকদের মৃত্যু রোধে ভূমিকা রাখবে।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ওষুধটি অলাভজনকভাবে সরবরাহের ফলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বৈষম্য কিছুটা হলেও কমবে এবং ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।