বরিশাল শহর ও আশপাশের এলাকায় টানা চার দিনের বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে বাসিন্দারা নানামুখী দুর্ভোগে পড়লেও, অপরদিকে কৃষকদের মুখে এসেছে স্বস্তির হাসি।
মঙ্গলবারও অন্যান্য দিনের মতো টানা বৃষ্টিতে মানুষ ঘরের ভিতরই সময় কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। বিশেষ করে দিনমজুর, ছাত্রছাত্রী ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে।
বরিশাল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৩ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি মৌসুমি বৃষ্টি। এমন বৃষ্টি বর্ষাকালে স্বাভাবিক। আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, এমন বৃষ্টি আরও দুই থেকে তিন দিন চলতে পারে, এরপর ধীরে ধীরে কমবে।”
এই আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত এবং নদীবন্দরে এক নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, কৃষকরা এই বৃষ্টিকে দেখছেন আশীর্বাদ হিসেবে। তাদের মতে, ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুতের উপযুক্ত সময় এখন। বৃষ্টির কারণে জমি নরম হবে এবং মাটির উর্বরতাও বাড়বে।
তবে শহরের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। টানা বৃষ্টির ফলে বরিশাল শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ড্রেন ও মৃত খালে পানি আটকে থাকায় সড়কে উঠে এসেছে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি।
রূপাতলী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে বাইরে বের হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ড্রেনের ময়লা রাস্তায় উঠে আসায় চলাচল আরও কঠিন হয়েছে।”
একই এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলী জানান, “রূপাতলী বাজারের মুখে এবং গোলচত্বরের পূর্ব পাশের রাস্তায় পানি জমে আছে।”
কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম বলেন, “প্রায় প্রতিটি গলিতেই পানি জমেছে। সারা বছর ড্রেন পরিষ্কার না করায় এমন অবস্থা হয়েছে। কেবল বড় কয়েকটি ড্রেন পরিষ্কার করলেই সমাধান আসবে না। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর দিকে আলাদা নজর না দিলে আমাদের দুর্ভোগ কমবে না।”
এদিকে বাবুগঞ্জ উপজেলার বহেরচর এলাকার কৃষক আবিদ হোসেন বলেন, “এই বৃষ্টির কারণে জমি নরম হয়ে গেছে, চাষে সুবিধা হবে। মাটির উর্বরতাও বাড়বে।”
সাপানিয়া এলাকার কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, “গরু ছাগল চরাতে সমস্যা হচ্ছে। তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তবে চাষাবাদের জন্য এই বৃষ্টি অনেক উপকারি।”
বরিশালের এই বৃষ্টি তাই একদিকে যেন আশীর্বাদ, অন্যদিকে অভিশাপ। কৃষকদের চোখে এটি চাষের সুযোগ, আর শহরের বাসিন্দাদের চোখে এটি দুর্ভোগের আরেক নাম। পরিস্থিতির উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।