রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। একইসঙ্গে সীমান্ত পারাপার সন্ত্রাস, অর্থায়ন ও নিরাপদ আশ্রয়স্থলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ওই হামলার পর ভারত সীমান্ত পারের জঙ্গি ঘাঁটিতে পাল্টা অভিযান চালায়, যার জেরে ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনব্যাপী উত্তেজনা তৈরি হয়।
ব্রিকস সম্মেলনে দেওয়া ঘোষণাপত্রে বলা হয়, “আমরা ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় নিন্দা জানাই। আমরা সন্ত্রাসবাদ ও এর সকল রূপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ। পহেলগামের হামলা শুধু ভারতের নয়, গোটা মানবজাতির ওপর আঘাত।”
তিনি সরাসরি কোনো দেশের নাম না নিয়ে বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিচার দেশ দেখে হওয়া উচিত নয়। কেউ সন্ত্রাসে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে দ্বিধা করা উচিত নয়। সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসীর পক্ষে নীরব সমর্থন রাজনৈতিক স্বার্থে হলে, তা কখনোই মেনে নেওয়া যাবে না।”
ঘোষণাপত্রে সন্ত্রাসবাদের আর্থিক উৎস, নিরাপদ আশ্রয় এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়। ব্রিকস ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্ত্রাস অর্থায়নের পথ বন্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপে একমত হয়।
বাণিজ্য নিয়েও উদ্বেগ জানায় ব্রিকস। যুক্তরাষ্ট্রের নাম না করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, “শুল্ক ও অ-শুল্ক প্রতিবন্ধকতা বিশ্ব বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) নেতৃত্বে একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থার পক্ষে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।”
ইরান ও রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেও অবস্থান নেয় ব্রিকস।
গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিকস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। গাজায় বেসামরিক স্থাপনায় হামলা, খাদ্যবঞ্চনা এবং মানবিক সহায়তা আটকে দেওয়াকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করে নেতারা। তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, বন্দিমুক্তি এবং মানবিক সহায়তার সুনিশ্চিত প্রবেশের আহ্বান জানান।
মোদি বলেন, “পশ্চিম এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত সংঘাত ও উত্তেজনার মধ্যেও আমরা বিশ্বাস করি, শান্তির পথই মানবতার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। যুদ্ধ নয়, সহমর্মিতা ও বিশ্বাসই ভবিষ্যতের ভিত্তি।”
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও ব্রেটন উডস প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে সংস্কারের দাবি তুলে ব্রিকস জানায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধি সংখ্যা বাড়াতে হবে। গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর জোরদার করতে ব্রাজিল ও ভারতের ভূমিকাও বাড়ানো উচিত বলে মনে করে জোটটি।
সারা বিশ্বের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও শান্তির প্রসঙ্গে ব্রিকস নেতাদের এ সম্মেলন নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা।