যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৮ শতাংশে, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনার মহামারির পর কিছু সময় বাদ দিলে এমন পরিস্থিতি ২০১৩ সালের পর দেখা যায়নি।
২০২২ সালে আইন ও ন্যায়বিচার বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া রেবেকা অ্যাটকিন্স দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ২৫০টির বেশি চাকরির আবেদন করেছেন। তবুও ফল শূন্য।
“প্রতিটি আবেদন যেন অন্ধকারে হারিয়ে যেত,” বলেন ২৫ বছর বয়সী এই তরুণী।
এই বেকারত্বের হার শুধু সামগ্রিক হারের চেয়ে বেশি নয়, বরং এটিকে অর্থনীতিবিদরা ‘অস্বাভাবিক’ বলে আখ্যায়িত করছেন।
২০২৫ সালে নতুন নিয়োগে ১৬ শতাংশ হ্রাস দেখা গেছে, জানায় পেইরোল ফার্ম গাস্টো। এর বড় একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে প্রযুক্তি, ফিন্যান্স ও ব্যবসা সংশ্লিষ্ট খাতে নিয়োগে ধীরগতি এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ম্যাথিউ মার্টিন জানান, নতুন চাকরিপ্রার্থীদের ওপর বর্তমান অবস্থার প্রভাব ভয়াবহ।
“আপনি যদি ভাবেন হোয়াইট কলার পেশা নিরাপদ, তাহলে এই তথ্য আপনাকে ভিন্ন চিত্র দেখাবে,” বলেন মার্টিন।
প্রযুক্তি খাতে নিয়োগ কমে গেছে ৪০ শতাংশের বেশি।
“এর পেছনে একদিকে অতিরিক্ত নিয়োগের পর সংশোধন, অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সম্ভাব্য প্রভাব রয়েছে,” বলেন মার্টিন।
EY-পার্থেননের প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ড্যাকো বলেন, নতুন প্রশাসনের অধীনে বাণিজ্য, করনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নীতিগত অস্থিরতা নিয়োগের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।
তবে তিনি এটাও মনে করেন, এখনই বলা উচিত নয় যে AI ইতিমধ্যে ব্যাপক হারে চাকরি কেড়ে নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার খরচ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। স্নাতক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীর বার্ষিক গড় খরচ প্রায় ২৭ হাজার ডলার।
২০২০ সালে ৩৬ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী শিক্ষাঋণ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছে। গড় ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার ডলার।
এমন অবস্থায় নতুন চাকরি না পেলে তরুণদের ওপর মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে।
২০২১ সালে পরিবেশ বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে পড়াশোনা শেষ করা কেটি ব্রেমার বলেন, “এক বছরের বেশি সময় লেগেছে পূর্ণকালীন চাকরি পেতে। সেটিও নিজের পছন্দের ক্ষেত্র ছিল না।”
অনেকে আয়ের ঘাটতি পূরণে বেবিসিটিং বা রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন।
“জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিতে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে,” বলেন ব্রেমার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চাকরি বাজারের স্থিতি পেতে সময় লাগবে। ততদিনে শিক্ষার্থীরা বিকল্প সাবজেক্টে ঝুঁকতে পারেন।
“অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,” বলেন মার্টিন।
নিজ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ব্রেমার বলেন, “আমার কখনো কখনো মনে হয়, আমাদের প্রজন্ম কীভাবে সামলাবে সব কিছু?”