দেশজুড়ে নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে একে “মহামারির মতো সংকট” হিসেবে বর্ণনা করেছেন সমাজকল্যাণ ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শরমীন এস মুর্শিদ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ২০ থেকে ২৯ জুনের মধ্যে দেশে অন্তত ২৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতি প্রতিরোধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নেতৃত্বে উপজেলা পর্যায়ে দ্রুত সাড়া দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “কুমিল্লার মুরাদনগরে এক গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় এরই মধ্যে একটি দ্রুত সাড়া দল গঠন করা হয়েছে।”
চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, “সরকার এসেছে গেছে, কিন্তু কেউই এই সহিংসতা রোধে সফল হয়নি। এর শেকড় রাজনীতি, মাদক, প্রযুক্তি এবং সামাজিক অবক্ষয়ে নিহিত।”
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “১০ বছর বয়সী একটি শিশু আড়াই বছর বয়সী একটি শিশুকন্যাকে যৌন নির্যাতন করেছে। এটি আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করব? সে বুঝতেই পারেনি সে কী করেছে।”
শরমীন আরও বলেন, “আমরা কি সত্যিই আমাদের সন্তানদের নিরাপদ রাখতে পারছি? এ জটিল সামাজিক সমস্যাকে আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই। প্রয়োজন মানসিক চিকিৎসা এবং কাউন্সেলিং।”
তিনি জানান, পর্নোগ্রাফিতে শিশুদের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারে থেকেই তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তার প্রশ্ন, “যদি বিশ্ব পারে নিয়ন্ত্রণ করতে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?”
মন্ত্রণালয়ের টোল-ফ্রি হটলাইনে গত ১০–১১ মাসে এসেছে ২ লাখ ৮১ হাজার অভিযোগ। যদিও জনবল সংকটের কারণে সব অভিযোগের ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি, তবে গুরুতর ঘটনাগুলোতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শতাধিক নারীকে সরাসরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলো নিয়েও বিশেষ নজর দেওয়ার কথা জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “মাদ্রাসাগুলো অনেক সময় নজরের বাইরে থেকে যায়। কিন্তু সেখানেও নির্যাতন হচ্ছে। এখন থেকে আমাদের কর্মকর্তারা স্কুল ও মাদ্রাসায় গিয়ে সরাসরি তদন্ত করবে।”
শরমীন জানান, “এখন থেকে কাজ হবে বার্ষিক পরিকল্পনায়, খণ্ডকালীনভাবে নয়। জেলা-উপজেলা পেরিয়ে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়েও কাজ পৌঁছাতে হবে। কোনো ঘটনা ঘটলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দল মাঠে নামবে।”
গণমাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ ও আক্রমণাত্মক ভিডিও প্রচারের বিষয়ে তিনি বলেন, “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারায় স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশও রয়েছে। তা সত্ত্বেও এসব ছবি ও ভিডিও প্রচার হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “ধর্ষক বা নির্যাতনকারীদের পরিচয় প্রকাশ করা উচিত, ভুক্তভোগীর নয়।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা কথা বলুন, প্রতিবাদ করুন। আপনাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সহযোগিতা চাই।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষে তিনি বলেন, “আমি একজন মানবাধিকার কর্মী হয়েও এখন এই অপরাধীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে। সহিংসতার মাত্রা আমাদের সহ্যসীমা ছাড়িয়ে গেছে।”
উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোমতাজ আহমেদ।