বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত এবং দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে মাদকের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে “আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস ২০২৫” উপলক্ষে এক সেমিনারে বক্তারা এই তথ্য তুলে ধরেন।
“অরাজকতা ভাঙার অঙ্গীকার: প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন” শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে সামিলিত নারী প্রয়াস।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এবং সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, “মাদকের সহজলভ্যতা, সস্তা দাম, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং সচেতনতার অভাবই মাদকাসক্তি বাড়ার প্রধান কারণ।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ১ কোটিতে পৌঁছাতে পারে।
অধ্যাপক ইয়াসমিন আরও বলেন, “গত এক দশকে ২০০ জনের বেশি অভিভাবককে তাদের মাদকাসক্ত সন্তান হত্যা করেছে। কিছু পুনর্বাসন কেন্দ্রে অমানবিক আচরণ করা হয় যা নতুন সংকট তৈরি করছে।”
সেমিনারে তিনি বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের মাধ্যমে আসক্তির কারণ বিশ্লেষণ করেন।
ঢাকা কলেজের অধ্যাপক সেলিনা ইয়াসমিন বলেন, “বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন না করলেও এখন তা একটি বড় ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের ৮০ শতাংশই মাদকাসক্ত এবং ৪৪ শতাংশ খুনের ঘটনায় মাদকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।”
তিনি তরুণদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাদকের দাম বাড়ানো ও সচেতনতা বাড়াতে বাজেট বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির বলেন, “দেশে গড়ে বছরে ৫০০ জন মাদকের কারণে মারা যান, যার মধ্যে প্রায় ১২৬ জন নারী।”
তিনি মোবাইল আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে উল্লেখ করে জানান, “৭৫ শতাংশ কিশোর ঘুমানোর আগে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা মোবাইল ব্যবহার করে। ঢাকার এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা-মা গড়ে প্রতিদিন মাত্র ৮ থেকে ১২ মিনিট সময় দেন সন্তানকে।”
সেমিনারে বক্তারা নারীকে আগামী প্রজন্মের স্থপতি হিসেবে উল্লেখ করে পরিবার ও সমাজে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
তারা “জুলাই চেতনা” থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের দাবি তোলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সহ-সমন্বয়ক তুনাজ্জিমু রাহিমুর। সেমিনারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা নারী গবেষক, সমাজকর্মী ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।