সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতা এ এইচ এম মুস্তফা কামাল, যিনি ‘লোটাস কামাল’ নামে পরিচিত, তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোট ১২টি মামলা দায়ের করেছে।
দুদকের অভিযোগ, মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের নামে মোট ১,১২৮ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছেন লোটাস কামাল ও তার পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় (ঢাকা-১) থেকে এসব মামলা করা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-এর বিভিন্ন পদের দায়িত্বে থাকাকালে লোটাস কামাল এবং তার ঘনিষ্ঠরা সরকারের নির্ধারিত ফি’র চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ আদায় করেন। প্রবাসী কর্মীদের পাসপোর্ট, মেডিকেল ও অন্যান্য সেবার নামে অতিরিক্ত অর্থ নেন এবং তা আত্মসাৎ করেন।
তদন্তে জানা যায়, ২০১৮ সালে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে ২০২১ সালে নতুন এক সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে পুনরায় চালু হয় প্রক্রিয়াটি। এর আওতায় ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ব্যয় নির্ধারিত হয় ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা।
তবে দুদক জানিয়েছে, প্রতিটি প্রবাসীর কাছ থেকে গড়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়। এভাবে ৬৭ হাজার ৩৮০ জনের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থে গঠিত হয় বিশাল অঙ্কের দুর্নীতির ফান্ড।
অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম মামলায় লোটাস কামাল ও তার স্ত্রী কাশমেরী কামালের মালিকানাধীন মেসার্স অরবিটাল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে ১০০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পরবর্তী মামলাগুলিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে—
দ্বিতীয় মামলায় ৫০ কোটি ১৬ লাখ টাকা,
তৃতীয় মামলায় ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা,
চতুর্থ মামলায় ৯১ কোটি ৪২ লাখ টাকা,
পঞ্চম মামলায় ১১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা,
সপ্তম মামলায় ১৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা,
অষ্টম মামলায় ১৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা,
নবম মামলায় ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা,
দশম মামলায় ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা,
একাদশ মামলায় ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা,
দ্বাদশ মামলায় ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
এছাড়া, লোটাস কামালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ২৭ কোটি টাকার অজানা উৎসের সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে এবং তার ৩২টি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৪৬ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
তার স্ত্রী কাশমেরী কামালের বিরুদ্ধে ৪৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগসহ ২০টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২৬ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মেয়ে কাশফি কামাল ৩১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১৭৭ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে অভিযুক্ত। আরেক মেয়ে নাফিসা কামালের বিরুদ্ধে ৬২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৯৯ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
তদন্তে আরও জানা যায়, মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত ‘অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান লোটাস কামাল পরিবার পরিচালনা করে, যেটির চেয়ারপারসন হিসেবে কাশমেরী কামালের নাম থাকলেও কোম্পানিটি ইউএই ঠিকানা ব্যবহার করে পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হলেও মালয়েশিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রয়েছে।
দুদক জানিয়েছে, তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ শেষে আইনি প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হবে।