প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন।
বুধবার (২ জুলাই) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে “জাপানের শ্রমবাজার: সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক সেমিনারে তিনি বলেন, “বর্তমানে সিন্ডিকেটের সীমাবদ্ধতার কারণে মালয়েশিয়া আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ হাজার কর্মী নেবে। অনেকের ধারণা অনুযায়ী এক থেকে দেড় লাখ নয়।”
তিনি বলেন, সমস্যা তৈরি হয়েছে আগের সরকার আমলে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির কারণে। ওই চুক্তিতে মালয়েশিয়ার সরকার নির্দিষ্ট কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা দেয়, যাদের বাংলাদেশে পরিচিতি রয়েছে সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে। বাংলাদেশ সরকার পরে চূড়ান্ত এজেন্সিগুলো নির্ধারণ করে।
আসিফ নজরুল বলেন, “এখন মালয়েশিয়াকে চুক্তি বাতিলে বাধ্য করা সম্ভব নয়। আবার পুরনো সিন্ডিকেট নির্ভর ব্যবস্থায় ফিরলেও দেশের অভ্যন্তরে জনরোষ তৈরি হতে পারে।”
এ অবস্থায় সরকারকে একটি ‘মধ্যপন্থা’ গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সীমিত কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি দিয়ে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ হাজার কর্মী পাঠানো যেতে পারে। না পাঠালে প্রায় দুই লাখ মানুষ আর্থিক বিপর্যয়ে পড়বে এবং মালয়েশিয়ার দিক থেকেও বাংলাদেশের প্রতি আস্থা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।”
জাপানে কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক বাংলাদেশি কর্মপ্রত্যাশী জাপানি ভাষা শিখলেও তাদের পেশাগত দক্ষতা নেই বলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
এই সমস্যা সমাধানে সরকার একটি ‘জাপান সেল’ গঠন করেছে, যা চাকরি প্রত্যাশীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে ও আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।
উপদেষ্টা জানান, সরকার এখন একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তির দিকে এগোচ্ছে যাতে কর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় এবং সিন্ডিকেট এড়িয়েই বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকার যদি সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশি কর্মীরা জাপান ও মালয়েশিয়া উভয় দেশেই আরও বেশি সুযোগ পেতে পারে। তবে এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং নীতিনির্ধারকদের বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।