মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি’তে সম্মত হয়েছে। তবে এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বীরশেভা শহরে আঘাত হানে, যাতে অন্তত চারজন নিহত এবং আটজন আহত হন।
মঙ্গলবার সকালে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে ইসরায়েলিরা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। একটি ভবন থেকে উদ্ধার করা হয় চারটি মরদেহ এবং আহতদের মধ্যে তিনজনকে আশপাশের ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়।
ইসরায়েল এখনো ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বীকার করেনি। তবে শেষ রাতে তেহরানে ইসরায়েলি হামলার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিত
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে এক পোস্টে লেখেন, “এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর, কেউ যেন এটি লঙ্ঘন না করে!” এর আগে তিনি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘর্ষকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ আখ্যা দেন।
হোয়াইট হাউস জানায়, যুদ্ধ থামাতে ইসরায়েলের সঙ্গে ট্রাম্প সরাসরি যোগাযোগ করেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, “ইসরায়েল যদি ভোর ৪টার মধ্যে হামলা বন্ধ না করে, তাহলে আমরা প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রাখব।”
যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা
সোমবার ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি আল-উদেইদে সীমিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। কাতার জানায়, তারা ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১৮টি আটকাতে সক্ষম হয়। তবে হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইরান দাবি করে, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পাল্টা জবাব। ট্রাম্প এটিকে ‘অত্যন্ত দুর্বল প্রতিক্রিয়া’ বলে মন্তব্য করেন।
ইসরায়েলের পাল্টা হামলা ও বন্দী বিষয়ক উদ্বেগ
ইসরায়েল পাল্টা হামলায় তেহরানের ইভিন কারাগারসহ নিরাপত্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে আঘাত হানে। এই কারাগারে রাজনৈতিক বন্দীসহ অনেক বিরোধী মতাবলম্বী আটক রয়েছেন।
ইরান দাবি করে, হামলার আগেই তারা পারমাণবিক উপকরণ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। তবে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা জানায়, ফোর্ডো স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
রেজিম পরিবর্তনের ইঙ্গিত ট্রাম্পের
ট্রাম্প বলেন, “যদি বর্তমান ইরানি সরকার ইরানকে আবার মহান করতে না পারে, তাহলে রেজিম পরিবর্তন কেন নয়?” তবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এটি ছিল কেবল একটি ‘প্রশ্ন উত্থাপন।’
মানবিক বিপর্যয় ও নিহতের সংখ্যা
ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত ও এক হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইরানে ইসরায়েলি ও মার্কিন হামলায় ৯৭৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৮৭ জন সাধারণ নাগরিক।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ইসরায়েল থেকে ২৫০ জন নাগরিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নিয়েছে।
যদিও ট্রাম্প যুদ্ধের ‘আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি’ ঘোষণা দিয়েছেন, বাস্তবতায় যুদ্ধবিরতির স্থায়ীত্ব এখনও অনিশ্চিত। ইসরায়েল ও ইরান পরস্পরের প্রতি নজর রেখে চলেছে এবং দুই দেশের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।