Thursday, July 3, 2025
Homeরাজনীতিগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানালেন খালেদা জিয়া

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানালেন খালেদা জিয়া

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে বিএনপির মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ও শহীদদের আত্মত্যাগের যথাযথ সম্মান জানাতে আমাদের এখনই কাজ শুরু করতে হবে।”

রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত “গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্রের যাত্রা” শীর্ষক আলোচনা সভায় ভিডিও লিংকের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। সভাটি ছিল গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হয় কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতার মধ্য দিয়ে।

খালেদা জিয়া বলেন, “শহীদদের রক্ত ও মায়ের চোখের অশ্রু যেন বিফলে না যায়। আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে, শহীদ জিয়া ও কোটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।”

তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ধ্বংস, নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ আনেন। সেই সঙ্গে একটি জাতীয় ভিকটিম তালিকা প্রণয়ন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, দ্রুত বিচার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসনের দাবি জানান।

পিআর পদ্ধতি বিভাজন আনতে পারে: তারেক রহমান

লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে বলেন, “যদিও কিছু দেশে পিআর পদ্ধতি চালু রয়েছে, তবে আমাদের দেশের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটি বিভাজন ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।”

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শহীদদের নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতিও দেন।

তিনি “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান: শোক ও বিজয় পালন” শিরোনামে ৩৬ দিনের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

শোকাহত পরিবার ও দর্শক-শ্রোতাদের আবেগ

অনুষ্ঠানে “জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্রের যাত্রা” শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। enforced disappearance ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের বেদনার কথা জানালে অনুষ্ঠানে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তারেক রহমানসহ অনেক দর্শককে চোখ মুছতে দেখা যায়।

শহীদ আবু সাঈদ, আবরার ফাহাদ, বিশ্বজিৎ দাস এবং নিখোঁজ পারভেজ হোসেনের স্বজনরা বক্তব্য রাখেন। মায়ের ডাক সংগঠনের সঞ্চিতা ইসলাম তুলিও বক্তব্য দেন।

বিএনপির সংস্কার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বিএনপি সংস্কারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা ইতোমধ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছি এবং জুলাই সনদ প্রণয়ন করেছি। এখন সরকারের উচিত সাড়া দেওয়া।”

তিনি গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে বিএনপির আপসহীন অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টি (জাফর) এর মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতের আবদুল হালিম, বিজেপির আন্দালিভ রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি সহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ।

শহীদদের ছবি ও “একদফা একদাবি”, “স্বৈরাচার নিপাত যাক” লেখা সম্বলিত শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি পুরো অনুষ্ঠানস্থলে সজ্জিত ছিল।

মাসব্যাপী কর্মসূচি চলমান

১ জুলাই মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে মাসব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হয়।

২৬ জুন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ৬ আগস্ট পর্যন্ত চলবে বিভিন্ন কর্মসূচি। এর মধ্যে রয়েছে র‍্যালি, নীরব পদযাত্রা, রক্তদান, পথনাটক, ফুটবল প্রতিযোগিতা, সেমিনার এবং ডেঙ্গু ও কোভিড-১৯ সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন।

গণঅভ্যুত্থান স্মরণে জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার ডাক নতুনভাবে প্রাণ সঞ্চার করেছে দেশের রাজনীতিতে।

RELATED NEWS

Latest News