বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতে চীনের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সোমবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশ-চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ফোরাম”-এ এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
“বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনা বিনিয়োগের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ ও করণীয়” শীর্ষক এ আয়োজন সিপিডি কর্তৃক আয়োজিত হয়। এতে অংশ নেন নীতিনির্ধারক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং চীনা বিনিয়োগকারীরা।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আবরার আহম্মেদ ভূঁইয়া যৌথভাবে গবেষণাটি উপস্থাপন করেন।
তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ এখনো জটিলতা ও অনিশ্চয়তায় ভরা। অনলাইনে আবেদনের সীমাবদ্ধতা, লাইসেন্স জটিলতা, নথিপত্র বারবার জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা, এবং আকস্মিক নীতির পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, সরকার লেটার অব ইন্টেন্ট (LoI) প্রদান করার পরও ৩১টি বৃহৎ সোলার প্রকল্প হঠাৎ বাতিল করেছে, যা প্রায় ৩৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এবং আনুমানিক ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিনিয়োগ প্রকল্প। এতে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৩০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, নীতির অস্বচ্ছতা, দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি বাস্তবায়নের দুর্বলতা, বহুস্তরীয় দরপত্র প্রক্রিয়া, জমি অধিগ্রহণের জটিলতা এবং সেবার ডিজিটাল ঘাটতি বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
রুফটপ সোলার এবং মার্চেন্ট পাওয়ার মার্কেটের মতো উদীয়মান খাতেও বাংলাদেশের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে বলে মত দেয় সিপিডি।
এ অবস্থায়, সিপিডি জরুরি ভিত্তিতে কিছু প্রস্তাবনা দেয়, যার মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল একক প্ল্যাটফর্মে ব্যবসায় নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রদান, দরপত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, রুফটপ সোলারের সীমা তুলে দেওয়া এবং ঝুঁকি ভাগাভাগির ব্যবস্থা চালু করা।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ বা বিকল্প প্রকল্প দেওয়ার মাধ্যমে আস্থা পুনঃস্থাপন করার তাগিদও দেয়া হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, “বাংলাদেশ যদি এই চ্যালেঞ্জগুলো এখনই সমাধান না করে, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিকল্প বাজারে চলে যেতে পারে। একটি স্বচ্ছ, পূর্বানুমানযোগ্য ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।”