জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজ রোববার রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা সংবিধানিক ও আইনগত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রস্তাবিত নিয়োগ কমিটির বিষয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান পুনর্বিবেচনা করে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনার সপ্তম দিনের শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, যারা এখনো এই কমিটি গঠনের বিষয়ে একমত হননি, তারা নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবেন এবং আলোচনা চালিয়ে সমাধানে পৌঁছানো যাবে।”
তবে বিএনপি এই কমিটির বিরোধিতা করছে, তাদের মতে এটি জবাবদিহিহীন এবং দেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
আলী রিয়াজ জানান, আলোচনায় কমিশন নিয়োগ কমিটির কাঠামো ও এখতিয়ার নিয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। এই কমিটি ছয়টি নির্দিষ্ট কমিশনের প্রধান ও সদস্য নিয়োগের সুপারিশ করবে।
এই ছয়টি কমিশন হলো: নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং তথ্য কমিশন।
তিনি বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানগুলো একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
কমিশন জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে চায় বলে জানান আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, “মতবিরোধ থাকতেই পারে, তবে আমরা আশা করি, অধিকাংশ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা গত সাত দিন ধরে আলোচনা করছি। কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার অর্জন এখনো হয়নি। কিন্তু কেউই চায় না আবার পিছিয়ে যেতে।”
আলোচনায় তিনি স্পষ্টভাবে জানান, কমিশনের ভূমিকা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নয় বরং অংশগ্রহণমূলক। “আমরা কেউ বিপক্ষ নই, কমিশন আপনাদের অংশ। আমরা শুধু আমাদের দায়িত্ব পালন করছি।”
আলী রিয়াজ বলেন, “কমিশন কিছু বিষয়ে নমনীয়তা দেখিয়েছে, কারণ আপনারা জনগণের প্রতিনিধি এবং আপনাদের মাধ্যমেই তারা শাসিত হবে।”
তিনি আরও জানান, ৭ জুলাই প্রয়াত আবু সায়েদের মৃত্যুবার্ষিকীতে সব দল মিলে জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করবে এমন স্বপ্ন তাদের ছিল। তবে এটি সম্ভব হবে কি না, তা এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
এদিন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) সহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা আলোচনায় অংশ নেন এবং তাদের নিজ নিজ দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, ১৫ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিয়ে একটি সম্মিলিত অবস্থান তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে।