দক্ষিণ ইউরোপে শুরু হয়েছে গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রথম তাপপ্রবাহ, যার প্রভাবে ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্সসহ বেশ কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলে বছরের পর বছর তাপমাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইতালির রাজধানী রোমে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শহরের হাজার হাজার পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের গন্তব্য হয়ে উঠেছে রোমের ২৫০০টিরও বেশি পাবলিক ফোয়ারা। ফ্রান্সের মারসেই শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছালে শহরের সাঁতার কাটা পুলগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে রোববার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চলেই তাপপ্রবাহ ও অগ্নিকাণ্ডের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
স্পেনে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছুঁয়েছে সেভিয়াতে। আগুন থেকে বাঁচতে সেখানে মধ্যাহ্নভোজ সময়ে বাইরের সব ধরনের শ্রম কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ইতালির লিগুরিয়া ও সিসিলিতেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
নিস শহরে দুপুরে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি ছাড়ালে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে ঠাণ্ডা পানি স্প্রের নিচে ও জাদুঘরে। শহরের একটি পার্কে বিশ্রামরত এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলেন, “আমরা পুরো দিন ঘরে বসে থাকতে পারি না।” শহরের শিশুদের নিয়ে পরিবারগুলো জল ছিটানো ফোয়ারা আর পার্কে ছায়ার নিচে সময় কাটাচ্ছে।
রোম, নিস, পালেরমো, সেভিয়া, ভেনিস—সব জায়গাতেই গরম থেকে বাঁচতে পানি, হালকা পোশাক, ছাতা, ফ্যান ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করছেন মানুষ। ভেনিসে অবস্থানরত এক মেক্সিকান পর্যটক বলেন, “আমি ঘুমাতে পারি না, প্রচুর ঘাম হচ্ছে। সারাক্ষণ পানিই খাচ্ছি।”
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) ও ইউরোপীয় জলবায়ু সংস্থা কপেরনিকাস জানিয়েছে, ইউরোপ ১৯৮০ সালের পর থেকে বিশ্ব গড়ের তুলনায় দ্বিগুণ গতিতে উষ্ণ হচ্ছে। চলমান এই তাপপ্রবাহকে জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি ফলাফল বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
২০২৪ সালকেই এখন পর্যন্ত বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাপপ্রবাহ, ঝড়, খরা ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়েছে বলেও সতর্ক করেছে বৈজ্ঞানিক মহল।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও গভীরভাবে অনুধাবন না করলে ভবিষ্যতের গ্রীষ্মকাল হতে পারে আরও বিপজ্জনক— এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।