উইম্বলডনের মাঠে যখন নতুন মৌসুমের টেনিস লড়াই শুরু হবে, তখন দৃশ্যপটে থাকবে এক বড় পরিবর্তন। ১৪৮ বছরের পুরনো ঐতিহ্যের ইতি টেনে এবার আর থাকছে না লাইন জজ। প্রথমবারের মতো এই ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম পুরোপুরি ইলেকট্রনিক লাইন কলিং (ELC) ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত হবে।
২০২৫ সাল থেকেই উইম্বলডনে আর শোনা যাবে না মাঠের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জজদের “আউট” বা “ফল্ট” ঘোষণা। আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ইউএস ওপেন এই ব্যবস্থায় চলে গেলেও ফ্রেঞ্চ ওপেন এখনো মানব-ভিত্তিক লাইন কলিং বজায় রেখেছে।
প্রযুক্তির সঙ্গে ঐতিহ্যের ভারসাম্য
টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর জেমি বেকার জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত বহু বছর ধরে আলোচনার মধ্যেই ছিল। এজেন্স ফ্রান্স প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা সবসময় চেয়েছি ঐতিহ্য রক্ষা করে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে। খেলোয়াড়দের প্রত্যাশাও এখন এমন যে লাইন কল প্রযুক্তি-নির্ভর হবে।”
তিনি আরও জানান, “আমাদের কাছে প্রতিযোগিতার সঠিকতা সবার আগে। আর যেহেতু খেলোয়াড়েরা এখন ELC-তে অভ্যস্ত, তাই এটি বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে উঠেছে।”
খেলোয়াড়দের চোখে প্রযুক্তির স্বাভাবিকতা
বেকারের মতে, খেলোয়াড়রাই এই পরিবর্তন সবচেয়ে কম অনুভব করবেন, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। ২০০৭ সাল থেকেই হক-আই প্রযুক্তি উইম্বলডনে কিছু কোর্টে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং খেলোয়াড়রা চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে কল যাচাই করার সুযোগ পেতেন।
নতুন প্রযুক্তি ব্যবস্থায় উইম্বলডন ও কোয়ালিফাইং ম্যাচে ৪৫০টিরও বেশি ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে পুরোপুরি মানব উপস্থাপনাও বাদ পড়ছে না। প্রায় ৮০ জন সাবেক লাইন জজ থাকবেন ম্যাচ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে, যাঁরা আম্পায়ারকে সহযোগিতা করবেন এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটির সময় ব্যাকআপ হিসেবেও প্রস্তুত থাকবেন।
একটি যুগের ইতি, আরেকটি শুরুর বার্তা
এমন পরিবর্তনে উইম্বলডনের ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে বেকার বলেন, “বরং এটি আমাদের কোর্টের পরিচিত রূপকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। সবুজ ঘাসের কোর্ট, সাদা পোশাকে খেলোয়াড়—এটাই উইম্বলডনের পরিচয়।”
তিনি মনে করেন, লাইন জজদের অনুপস্থিতিতে কোর্টের কেন্দ্রে মনোযোগ আরও বাড়বে খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতায়, যা টেনিসের প্রকৃত রূপ তুলে ধরবে।
টেনিস ইতিহাসে উইম্বলডনের পরিবর্তন সর্বদাই নজর কাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। লাইন জজের বিদায়ের মধ্য দিয়ে প্রযুক্তি নির্ভরতার নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের কোর্ট গুলোতে আরও নিখুঁত এবং নিরপেক্ষ খেলার পরিবেশ নিশ্চিত করবে। এখন দেখার বিষয়, এই রূপান্তর কতটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায় খেলোয়াড়, দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে।