ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (দাকসু) দীর্ঘ সময় তরল অবস্থার পর এবার নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এ নির্বাচন জনস্বার্থে এক সুযোগ হিসাবেই দেখা হচ্ছে। চলমান আন্তঃঅস্থায়ী সরকারের সময় দাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বহুকালীন কাঠামোগত সমস্যাগত সংস্কার সম্ভব বলে ধারণা ছাত্র সংগঠনগুলোর।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে এবং কিছু সংশোধনী চালু করেছে। তবে প্রধান বিরোধ রয়েছে ভিসির ex‑officio সভাপতি পদ প্রথা নিয়ে। সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রায় সবার দাবি ছিল সরাসরি নির্বাচিত সভাপতি চান, কিন্তু চূড়ান্ত সংস্কৃতিতে সেই দাবি পূরণ হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট অনুমোদিত সংশোধিত সংবিধানে বলা হয়েছে যেসব ছাত্রপ্রস্তাব এসেছিল তার অধিকাংশ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সংবিধানে এমন ধারা রাখা হয়েছে যে ভিসি একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলে তা সিন্ডিকেট ও সেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন।
দাকসু প্রধান রিটার্নিং অফিসার ড. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হয়েছে এবং নির্বাচন চলাকালীন কোনো বড় বাধা দেখা দিচ্ছে না।
তবে কিছু সংগঠন হতাশ। বিএসইউ, জেডিসি, বিদ্রোহী শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্রনেতারা বলেন, ভিসির থাকার কাঠামোই সংস্কারকে অসম্পূর্ণ রেখেছে। সংবিধান নিজস্ব পরিবর্তন করার অধিকার না থাকায় শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেট ও সেন্টারে প্রতিনিধিত্বে অংশ নিতে পারবে না।
বিশেষ গ্রুপগুলোর বক্তব্য অনুযায়ী, ভিসি রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে থাকেন যা নির্বাচনকে নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করতে বাধা সৃষ্টি করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে নির্বাচনের নামে নিয়ন্ত্রিত ও একঘেয়ে পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ কমিশন জানাচ্ছে সাংগঠনিকভাবে এই নির্বাচন সম্ভাব্যভাবে স্বচ্ছ হবে যদি প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকে। সংস্থাপন সূত্র জানিয়েছে নির্বাচন সম্পন্ন করতে দুই মাস সময় লাগতে পারে।
দাকসু বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ বলা হয়। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে দাকসুর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অনেক প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ দাকসু থেকে উঠে এসেছেন।
গত ২০১৯ সালের মার্চে প্রায় দুই দশকের বিরতি শেষে দাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে বিদ্যমান ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের জোটগুলো প্রভূত প্রভাব দেখিয়েছিল। এবার ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকায় নতুন সংগঠনগুলোর সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠিত নেতা বলতে দাকসুতে সরাসরি এবং কাঠামোগতভাবে পরিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা গেলে, সংগঠনগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে এবং ভবিষ্যতের ছাত্র নেতৃত্ব গড়বে।