যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার একে “বৃহৎ বিজয়” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ, দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের ক্ষমতা সীমিত করেছে, যারা অতীতে ট্রাম্পের কিছু নীতিকে স্থগিত করে জাতীয় পর্যায়ে আদেশ জারি করেছিলেন।
এই রায়ে বলা হয়েছে, জেলা আদালতের বিচারকরা আগামি দিনে আর সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর জাতীয় স্থগিতাদেশ দিতে পারবেন না। তবে, কিছু ক্ষেত্রে দলভুক্ত মামলাগুলো (class action lawsuits) এর আওতায় পড়ে সীমিত পরিসরে প্রতিকার পেতে পারে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা অঞ্চল।
এই রায় শুধুমাত্র ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য নয়, ভবিষ্যতের সব প্রেসিডেন্টদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে বলে আদালত জানায়।
ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব (birthright citizenship) বাতিলের প্রচেষ্টা থেকেই এই মামলার সূচনা। তবে সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্বাহী আদেশের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি।
তবে আদালতের ৬-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে বলা হয়, “জেলা আদালতের জাতীয় স্থগিতাদেশ আইনি সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে যা কংগ্রেসের প্রদত্ত ক্ষমতার বাইরে।”
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, “সুপ্রিম কোর্টে জায়ান্ট উইন! এমনকি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের মতো প্রতারণাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই রায়ে।”
বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেট লিখেছেন, “যখন কোনো আদালত মনে করে নির্বাহী শাখা বেআইনি কাজ করেছে, তখন প্রতিকারও হতে হবে আইনি সীমার মধ্যে।”
তিনজন লিবারেল বিচারপতি রায়ের বিরোধিতা করেছেন। বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র বলেন, “এই রায় সংবিধান পাশ কাটাতে সরকারের জন্য একটি খোলা আমন্ত্রণ।”
এই রায়ের ফলে শুধু ট্রাম্প নয়, ভবিষ্যতের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কার্যনীতিতে আদালতের হস্তক্ষেপ সীমিত হতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানির সময় উভয় পক্ষের বিচারপতিরাই জেলা আদালতের জাতীয় আদেশের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসী বা অস্থায়ী ভিসাধারী বাবা-মায়ের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে না।
তবে ম্যারিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস ও ওয়াশিংটনের আদালত এই আদেশকে সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, “যে কোনো ব্যক্তি যিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এখানকার বিচারিক এখতিয়ারে রয়েছেন, তিনি এই দেশের নাগরিক।”
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রসহ মাত্র ৩০টি দেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব (jus soli) কার্যকর রয়েছে।
সাবেক হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপসচিব কেন কুচিনেল্লি বলেন, “এই রায় শুধু ট্রাম্পের নয়, বরং রাষ্ট্রপতির দপ্তরের জন্য একটি বড় বিজয়। কারণ এটি একটি প্রক্রিয়াগত রায় যা ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিষয়টি পরবর্তী এক-দুই বছরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই রায় রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।