মোংলার পশুর নদীতে ৯১৪ টন ফ্লাই অ্যাশ নিয়ে একটি কার্গো জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে এ ঘটনায় কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটির নাম এমভি মিজান-১। এটি ভারতের বন্দেল, কলকাতা থেকে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বসুন্ধরা ঘাটে যাওয়ার পথে মোংলায় থেমেছিল। পশুর নদীর চ্যানেলে নোঙর করার সময় অপর একটি লাইটার জাহাজ এমভি কে আলম গুলশান-২ এর সঙ্গে সংঘর্ষ হলে মিজান-১ এর তলদেশ ও পাশের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নদীতে ডুবে যায়।
কার্গোর ক্যাপ্টেন শওকত শেখ জানান, সংঘর্ষের পর জাহাজে দ্রুত পানি ঢুকতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি ডুবে যায়। তবে জাহাজে থাকা ১০ জন নাবিক সবাই সাঁতরে নিরাপদে তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
দুর্ঘটনার পরপরই পরিবেশবাদী ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা নদীতে ফ্লাই অ্যাশ মিশে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পশুর রিভার ওয়াটারকিপার শেখ মোহাম্মদ নূর আলম বলেন, বন্দরের পক্ষ থেকে চ্যানেল সচল থাকার দাবি করা হলেও নদীর পানিতে ফ্লাই অ্যাশ মিশে যাওয়ায় জলজ প্রাণীর ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি জানান, ফ্লাই অ্যাশে সীসা ও পারদের মতো ভারী ধাতু থাকে যা পানিকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে এবং এর ফলে জলজ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ফ্লাই অ্যাশ হলো শিল্পবর্জ্য যা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থে ভরপুর। এটি পানিতে মিশে গেলে নদীর স্বাভাবিক রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলতে পারে, যা জলজ প্রাণীদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মাছের প্রজনন মৌসুম চলমান। ফলে ডিম ও পোনার ওপর এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে।
উল্লেখ্য, পশুর নদী সংলগ্ন এলাকা সুন্দরবনের খুব কাছাকাছি হওয়ায় দুর্ঘটনার প্রভাব শুধু নদীতেই সীমাবদ্ধ না থেকে বনাঞ্চল ও প্রতিবেশের উপরও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানায়নি।