ডেইলি প্রতিদিনের বাণী রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২৫, ২০:৪১
নিজস্ব প্রতিবেদক — রাজধানী
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী ও অপরাধীদের দখলে। সন্ধ্যা নামলেই উদ্যানজুড়ে শুরু হয় ভয়ংকর এক চিত্র—গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা মাদকের অবাধ কেনাবেচা, সঙ্গে ছিনতাই ও ব্ল্যাকমেইল। ঢাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হওয়ার পর এ নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া এই উদ্যানে সন্ধ্যার পর মুক্তমঞ্চ, ছবিরহাট, লেকপাড়, টিএসসি ও বিভিন্ন গেটে দেখা মেলে মাদক ব্যবসার দৃশ্য। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পারুলী, নাসু, হৃদয়সহ অন্তত ১০ জনের নেতৃত্বে ৬০–৭০ জনের একটি মাদক সিন্ডিকেট সেখানে সক্রিয়।
এক রিকশাচালক বলেন, “এখানে গাঁজা কিনতে ছাত্র, রাজনীতিক, এমনকি চাকরিজীবীরাও আসে। প্রকাশ্যেই গাঁজার আসর বসে।”
ঢাবির শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুলিশের সামনে মাদক বিক্রি হলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে। গ্লাস টাওয়ার, চারুকলার গেট, মন্দিরের পাশে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। হিজড়ার দল ভয় দেখিয়ে মোবাইল-টাকা ছিনিয়ে নেয়, আবার জুটিদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, কিছু শিক্ষার্থী নিজ বান্ধবীদের ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করে।
সাধারণ দর্শনার্থীরা বলছেন, এ ধরনের অপরাধের কারণে উদ্যানটি নিরাপদ পারিবারিক স্থান হিসেবে হারাচ্ছে মর্যাদা। আসমা বেগম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, “এই ঐতিহাসিক স্থানকে অপরাধীদের দখলে যেতে দেওয়া যায় না।”
আরও পড়ুন:
- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবির ছাত্র, হামলাকারীরা পলাতক
- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নিরাপদ করতে যৌথ অভিযান ও স্থায়ী ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম অভিযোগ করেছেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখছে না, বরং এদের সঙ্গে আঁতাত করে চলছে অপরাধের ভাগাভাগি।”
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর স্বীকার করেন, “উদ্যানটি উন্মুক্ত, তাই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন। তবে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্যানজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা, স্থায়ী পুলিশ টহল, এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া উদ্যানকে পুনরায় নিরাপদ করে তোলা সম্ভব নয়। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেন জাতির গৌরবের প্রতীক হয়, অপরাধীদের নয়—এটাই এখন সময়ের দাবি।