ইতালীয় চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র নিভে গেল। কিংবদন্তি অভিনেত্রী লিয়া মাসারি আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। ইতালীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার রোমে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে লিয়া মাসারি কাজ করেছেন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং মঞ্চে। তবে সব সময়েই ছিলেন প্রচারের আলো থেকে দূরে। দীর্ঘ তিন দশক আগে অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার পর খুব কম জনসমক্ষে এসেছেন।
জন্মসূত্রে নাম ছিল আনা মারিয়া মাসাতানি। ১৯৩৩ সালের ৩০ জুন জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ের আগেই প্রাণ হারানো তাঁর প্রেমিক লিও’র নাম থেকেই ‘লিয়া’ নাম গ্রহণ করেন। বাবার চাকরির সূত্রে ছোটবেলা কাটে স্পেন, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে। স্থাপত্য বিষয়ে পড়াশোনা করতেন, পাশাপাশি মডেলিং করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই সময়েই পরিবারের বন্ধু ও অস্কারজয়ী কস্টিউম ডিজাইনার পিয়েরো গেরার্দির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে।
১৯৫৫ সালে মারিও মনিচেলির ‘ফরবিডেন’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন। এরপর ১৯৫৭ সালের ‘ড্রিমস ইন অ্যা ড্রয়ার’ সিনেমায় এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছাত্রীর চরিত্রে নজর কাড়েন। তবে ব্যাপক খ্যাতি আসে ১৯৬০ সালে মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনির পরিচালনায় ‘লা’ভেন্তুরা’ সিনেমায় ‘আনা’ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে।
পরবর্তী সময়ে দীনো রিসির ‘অ্যা ডিফিকাল্ট লাইফ’ (১৯৬১), লুই মাল পরিচালিত ‘মারমার অব দ্য হার্ট’ (১৯৭১), ও ভ্যালেরিও জারলিনির ‘ইন্ডিয়ান সামার’ (১৯৭২)-এ তার অনবদ্য অভিনয় সিনেমা প্রেমীদের মনে দাগ কাটে।
তিনি অভিনয় করেছেন আলাইন ডেলন, জঁ-পল বেলমোন্দো, ওমর শরিফ, মিশেল পিকোলির মতো তারকাদের সঙ্গে।
‘অ্যা ডিফিকাল্ট লাইফ’ সিনেমায় ফ্যাসিবাদের বিরোধী এক বুদ্ধিজীবীর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছিলেন ডেভিড ডি ডনাটেলো পুরস্কার। পরে ফের একই ধরণের চরিত্রে দেখা যায় ফ্রান্সেস্কো রোসির ‘ক্রাইস্ট স্টপড অ্যাট এবোলি’ (১৯৭৮) ছবিতে।
ইউরোপের আরও অনেক খ্যাতিমান পরিচালকের প্রিয় ছিলেন মাসারি। ক্লদ সোতের ‘দ্য থিংস অব লাইফ’ (১৯৭০), শান্তাল আকারমানের ‘মিটিংস উইথ আনা’ (১৯৭৮) সিনেমায় অভিনয় করেন। এমনকি ফেদেরিকো ফেলিনির ‘৮ ১/২’ সিনেমার প্রধান নারী চরিত্রের জন্য অডিশনও দিয়েছিলেন।
১৯৬৩ সালে আলিতালিয়ার সাবেক পাইলট কার্লো বিআনকিনিকে বিয়ে করেন। তাদের কোনো সন্তান হয়নি। ২০০৪ সালে তারা আলাদা হয়ে যান। অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার পর লিয়া মাসারি পশু অধিকারের বিষয়ে সরব হন এবং শিকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।
একজন ‘অ্যান্টি-ডিভা’ হিসেবে লিয়া মাসারি ছিলেন সিনেমা জগতের অনন্য ব্যক্তিত্ব। প্রথাগত তারকা হওয়ার পথে না হেঁটে তিনি বেছে নিয়েছিলেন নিজের মতো করে জীবন ও শিল্পকে উপভোগের পথ।