সম্প্রতি থেমে যাওয়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে বলা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্থিতিশীল উত্তেজনার উদাহরণ।
যদিও একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে, তবে বিগত সপ্তাহগুলোর ঘটনা প্রমাণ করেছে, কতটা কাছাকাছি ছিল একটি বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধ, আর সেই অস্থিরতা এখনও কাটেনি।
মূলত এই যুদ্ধ শুরু হয় ইসরায়েলের ইরানে গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার মধ্য দিয়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলি শহরগুলোতে আঘাত হানে। পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে বসে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক ছিল ইরানের সিদ্ধান্ত, যখন তারা যুদ্ধক্ষেত্র বিস্তৃত করে কাতারে আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছোড়া কিছু ক্ষেপণাস্ত্র কাতারি ও মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ধ্বংস করা হলেও, অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির পাশের একটি ভবনে আঘাত হানে। যদিও কেউ হতাহত হয়নি, ঘটনাটি এক বৈপ্লবিক বাঁক তৈরি করে।
কাতার এই হামলাকে তার সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেয়। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন ও ওমান কাতারের পাশে দাঁড়িয়ে কঠোর নিন্দা জানায়।
এই প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট, কেবল কূটনৈতিক শিষ্টাচার নয়, বরং এটি ছিল একত্রিতভাবে যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
প্রশ্ন ওঠে, ইরান কেন একটি নিরপেক্ষ গালফ রাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করলো, যেখানে তারা কেউই এই যুদ্ধের অংশ ছিল না বা কোনো সামরিক তৎপরতায় সহায়তা করেনি?
ইরান দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অথচ কাতারে হামলা করে তারা নিজেরাই সেই মানদণ্ড ভঙ্গ করেছে। এই দ্বিমুখী আচরণ আন্তর্জাতিক পরিসরে ইরানের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
যদিও যুদ্ধবিরতি আশার আলো জাগায়, তবে কাতারে হামলা ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গালফ অঞ্চলে তেল-গ্যাস অবকাঠামো রয়েছে যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি উত্তেজনা এই অবকাঠামো, সমুদ্র বন্দর ও পরিবহন লাইনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইরানকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে, ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব কোনো নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে গড়িয়ে পড়া যাবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব শক্তিগুলোকে জোরালোভাবে বলতে হবে, শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্রের ওপর সামরিক হামলা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
কূটনৈতিক পথ রয়েছে, যার মাধ্যমে ইরান তার উদ্বেগ জানাতে পারে। প্রতিবেশীদের লক্ষ্যবস্তু বানানো সেই সমস্যার সমাধান নয়, বরং তা আরও গভীর সংঘাতের জন্ম দেয়।
সার্বিকভাবে বলা যায়, যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী স্বস্তি এনে দিলেও কাতারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার ওপর বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
গালফ রাষ্ট্রগুলো সবসময় শান্তির পক্ষে থেকেছে, তাই তাদের আঘাত করা শুধু অন্যায় নয়, ছিল এক বড় কৌশলগত ভুল।
ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। সংঘাত যেন মূল পক্ষেই সীমাবদ্ধ থাকে, নিরপেক্ষ অঞ্চলে নয়।