ঢাকায় শুরু হয়েছে ছয়দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক মেডিকেল মিশন, যার মাধ্যমে ক্লেফট ঠোঁট ও তালু সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সার্জারি প্রদান করা হচ্ছে। মুখমণ্ডলের সবচেয়ে সাধারণ জন্মগত ত্রুটির মধ্যে ক্লেফট ঠোঁট ও তালু অন্যতম, যা শিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি করে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীর ফুলবাড়ীতে অবস্থিত সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে এ মিশনের উদ্বোধন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেসুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগকে দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন।
Smile Asia, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মুখমণ্ডলের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, এ মিশনের আয়োজন করেছে। এতে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সংস্থা সাজিদা ফাউন্ডেশন।
Smile Asia-এর ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ১২টি দেশের ডাক্তার, নার্স, থেরাপিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা এই মিশনের আওতায় নির্বাচিত শিশুদের সার্জারি ও পরবর্তী চিকিৎসা প্রদান করবেন।
প্রথম দিনে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ১১৫ শিশুর তালিকা থেকে প্রায় ১০০ শিশুকে শারীরিক ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে সার্জারির জন্য নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তী পাঁচ দিনে তাদের ওপর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হবে।
তিন মাস থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা ক্লেফট ঠোঁট এবং নয় মাস থেকে ১০ বছর বয়সীরা ক্লেফট তালুর চিকিৎসার জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি ৭০০ নবজাতকের মধ্যে একজন ক্লেফট ঠোঁট বা তালু নিয়ে জন্ম নেয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ হাজারের বেশি শিশু এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয়।
Smile Asia-এর মহাসচিব অভিমন্যু তালুকদার জানান, এটি বাংলাদেশে তাঁদের সপ্তম মেডিকেল মিশন এবং সাজিদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে প্রথম যৌথ উদ্যোগ। তিনি বলেন, “আমরা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এমন মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি এবং বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে।”
সাজিদা ফাউন্ডেশনের সিইও জাহিদা ফিজা কবির বলেন, “স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো আমাদের অঙ্গীকার।”
হাসপাতালের মহাপরিচালক ডা. মো. এ. রাজ্জাক সরকার বলেন, “এই কার্যক্রম হাসপাতালের চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যতে আরও কার্যকরী মেডিকেল মিশনের আয়োজনের পথ প্রশস্ত করবে।”
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, “সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আরও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে দেশের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে।”
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে সব প্রকল্পের কার্যক্রম প্রথম দিন থেকেই শুরু করার ওপর জোর দেন যাতে সময় ও সম্পদের অপচয় রোধ করা যায়। এছাড়া তিনি চিকিৎসকদের মানবিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা চিকিৎসা নেওয়া শিশুদের খোঁজ নেন, সেবা বুথ পরিদর্শন করেন এবং মেডিকেল দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এই মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু শিশুর মুখাবয়ব নয়, বদলে যাবে তাদের ভবিষ্যতও।