Tuesday, June 24, 2025
Homeজাতীয়মব হিংসার ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি, বাস্তবে চিত্র ভিন্ন

মব হিংসার ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি, বাস্তবে চিত্র ভিন্ন

সাবেক সিইসি হুদাকে নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার ভিডিও ভাইরাল, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার বাসায় হামলার ঘটনায় সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একদিন আগেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তিন সাবেক সিইসিসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিএনপি একটি মামলা দায়ের করে। এর পরদিন সন্ধ্যায় উত্তরার নিজ বাসা থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে মারধর ও অপমানের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি ও সাদা টি-শার্ট পরা হুদাকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি টানতে টানতে বের করে আনছে, চড়-থাপ্পড় দিচ্ছে, এমনকি তার গলায় জুতা পরানো মালা পরিয়ে অপমান করছে।

পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগ জানায়, সাবেক সিইসিকে তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তবে ডিএমপি সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে পরদিন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হুদাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সেখানে তার ওপর ঘটে যাওয়া মব হিংসার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

সরকারের তরফ থেকে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি এবং আইন লঙ্ঘন।” একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে।

গৃহায়ন উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মব জাস্টিস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার (হুদা) সঙ্গে যা হয়েছে, তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।”

তিনি আরও বলেন, “ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত ছিল, তারপরও এ ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং কোনো বাহিনীর সদস্য জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা আসেনি। উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, মব ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে।

সরকারি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এমন মব হিংসার ঘটনা একের পর এক ঘটলেও, কার্যকর কোনো পদক্ষেপ তারা দেখতে পাচ্ছে না।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ এক বিবৃতিতে বলে, “আদালতের বাইরে কাউকে অপমান ও হেনস্তা করা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অধিকারের লঙ্ঘন নয়, বরং তা দণ্ডনীয় অপরাধ।”

তারা মনে করে, সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল অসম্পূর্ণ ও দায়িত্বহীন।

আইন ও মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে জানায়, “জনগণের হাতে আইন তুলে নেওয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে। এটি আইনের শাসনকে খর্ব করে।”

সংগঠনটি হুঁশিয়ার করে বলেছে, “সরকারি নীরবতা বা নিষ্ক্রিয়তা সহমত প্রকাশের ইঙ্গিত দিতে পারে।”

তাদের ভাষ্যমতে, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সময়েই অন্তত ৮৩ জন মানুষ বিভিন্ন মব হিংসায় নিহত হয়েছে।

আসকের মতে, এমন সহিংসতার সংস্কৃতি রোধে সরকারকে কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, নইলে আইন প্রতিষ্ঠায় মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হবে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “সরকার এ দায় এড়াতে পারে না। এটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যর্থতার চিহ্ন।”

সার্বিকভাবে, হুদার ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সংকেত নয়, বরং বড় পরিসরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সক্ষমতা ও সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। এখন দেখার বিষয়, সরকার বাস্তবে কতটুকু কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

RELATED NEWS

Latest News