পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন শনিবার ইরানের ওপর ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ৫১তম ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিল সভায় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশ ইসরায়েলের উসকানিমূলক পদক্ষেপের অবসান চায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায় যেন তারা ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনে এবং কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক নিয়মের ভিত্তিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসাথে কাজ করে।”
তিনি বলেন, ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা একটি সরাসরি আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। এই ধরনের দায়িত্বহীন পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে।
ওআইসি সম্মেলনে গাজার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ইসরায়েল ৬০০ দিনের বেশি সময় ধরে গাজায় গণহত্যামূলক হামলা চালাচ্ছে। এতে অসংখ্য নিরীহ প্রাণহানি ঘটছে, বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।”
গাজায় একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে তৌহিদ বলেন, “আমরা পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমারেখার ভিত্তিতে স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি বিশ্বস্ত ও অপরিবর্তনীয় পথ চাই।”
রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট আর সহনীয় নয়। এটি একটি নিরাপত্তা হুমকিতে পরিণত হতে পারে। এর সমাধান একমাত্র মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের মধ্যেই নিহিত।”
তিনি মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং গাম্বিয়ার নেতৃত্বে আইসিজেতে চলমান আইনি উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
তৌহিদ হোসেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে ওআইসি সদস্যদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান।
বিশ্বজুড়ে মুসলিম বিশ্বের সংকট নিয়ে তিনি আরও বলেন, “ইয়েমেন, সুদান, লিবিয়া ও সিরিয়ার মতো সংঘাতময় অঞ্চলে ওআইসি’র মধ্যস্থতা, শান্তি নির্মাণ ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম আরও জোরদার করা জরুরি।”
ইসলামবিদ্বেষ মোকাবিলায় জাতিসংঘের ১৫ মার্চ আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা করার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “ঘৃণা রোধ, সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং আমাদের ধর্মের মর্যাদা রক্ষায় ওআইসি’কে আইনি, শিক্ষামূলক ও গণমাধ্যমভিত্তিক কৌশল গ্রহণে নেতৃত্ব দিতে হবে।”
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তিনি ওআইসি জলবায়ু সহনশীলতা উদ্যোগ এবং একটি উদ্ভাবনী নেটওয়ার্ক গঠনের প্রস্তাব দেন, যেখানে তরুণ গবেষকরা যুক্ত হতে পারবেন।
তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্পর্কেও ওআইসি প্রতিনিধিদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার শান্তিপূর্ণ ও জনগণকেন্দ্রিক একটি রূপান্তর প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।”
তিনি ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা ঐক্যবদ্ধ থেকে ন্যায়বিচার, সাম্য ও সংহতির ভিত্তিতে একটি রূপান্তরমূলক শক্তি হিসেবে সংস্থাটির ভূমিকা আরও শক্তিশালী করে।