বান্দরবানের আলীকদমে ফেসবুক ভিত্তিক ট্যুর অপারেটর ‘ট্যুর এক্সপার্ট’-এর অব্যবস্থাপনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন পর্যটক। নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন। গাইড ছাড়া পাহাড়ি ঝরনার বিপদজনক ট্রেইলে পাঠানো হয়েছিল ২২ জনের একটি দল। পরবর্তীতে উদ্ধার হয় শেখ জুবায়েরুল ইসলাম ও স্মৃতি আক্তারের মরদেহ। এখনও কোনো খোঁজ নেই ট্যুর হোস্ট হাসানের।
দলের বেঁচে ফেরা সদস্য শাহ পরান জানান, “ট্যুর অপারেটরের হোস্ট হাসান দায়িত্ব পালন করেননি। গাইড না থাকায় আমরা পাহাড়ে সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছিলাম।” ঝরনার পাশে হাসান, জুবায়ের ও স্মৃতি আলাদা হয়ে গেলে বাকিরা আর তাদের খুঁজে পাননি।
অভিযোগ রয়েছে, তারা ৩৩ জন নিয়ে গিয়েও মাত্র ১২ জনের নাম প্রশাসনের খাতায় দেখিয়েছেন। ফলে প্রয়োজনীয় চারজন গাইডের পরিবর্তে ছিল মাত্র একজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মোমিন বলেন, “গাইড ছাড়া এভাবে কাউকে পাহাড়ে পাঠানো আইন লঙ্ঘন।”
দুর্ঘটনার পর ট্যুর এক্সপার্টের অ্যাডমিন বর্ষা ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে নিহত স্মৃতির বাবার দায়ের করা মামলায় অবহেলার অভিযোগ আনা হয়। তবে পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
ভূতপূর্ব পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার বলেন, “আমাদের পাহাড়গুলো ভঙ্গুর এবং বর্ষায় অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই সময়ে ট্রেকিং এড়ানো উচিত। প্রতিটি অপারেটরকে প্রশিক্ষিত গাইড রাখতে হবে এবং পর্যটকদের সচেতন করতে হবে।”
বান্দরবানে পর্যটকদের মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। ২০১৮ থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একাধিক মৃত্যু ঘটেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ট্রেকিং বিপজ্জনক হলেও তা নিয়ে পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরি হয়নি।
পাহাড়ি ট্রেইলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ফেসবুকভিত্তিক ট্রিপ গ্রুপগুলো নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক ১০ জন পর্যটকের জন্য একজন গাইড থাকা বাধ্যতামূলক।
ট্যুরিস্ট ও প্রশাসন দু’পক্ষই মনে করছেন, এবার সময় এসেছে নিয়ম কড়াভাবে প্রয়োগের। জীবনের বিনিময়ে যেন আর কোনো পাহাড়ি রোমাঞ্চ না আসে, সেদিকে সবার দৃষ্টি থাকা জরুরি।