ঈদুল আজহার পর ঢাকার বাজারে হঠাৎ করেই চালের দাম বেড়ে গেছে। রেকর্ড পরিমাণ বোরো ধান উৎপাদনের পরও এই মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তা ও কৃষক উভয়ের জন্যই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এবার দেশের বোরো ধানের উৎপাদন ইতিহাসে সর্বোচ্চ হয়েছে। এরইমধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি ধান কাটা শেষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৪৮ লাখ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২ কোটি ১৪ লাখ টন ধান উৎপন্ন হয়েছে।
তবুও রাজধানীর খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮২ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিল ৭২ থেকে ৭৪ টাকা। মোজ্জামেল মিনিকেটের দাম ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজি। ব্রি-২৮, ব্রি-২৯ ও পাজাম জাতের মাঝারি দানার চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা করে এবং এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা দরে। স্বর্ণা জাতের মোটা চালের দাম বেড়েছে ২–৩ টাকা, বর্তমান দাম ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা কেজি।
পাইকারি বাজারেও চালের দাম বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে মিনিকেট চালের প্রতি ৫০ কেজির বস্তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৯০০ থেকে ৪০০০ টাকায়, যেখানে ঈদের আগে ছিল ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকা। ব্রি-২৮ ও পাজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ থেকে ৩১০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মো. শাওন বলেন, “এখন চালের দাম বাড়ার কোনও যৌক্তিক কারণ নেই। কিন্তু ঈদের পর প্রতিদিনই দাম বাড়ছে।”
ব্যবসায়ী ও কৃষি বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু করপোরেট কোম্পানি ও চালকল মালিকরা ঈদের আগে কম দামে ধান কিনে মজুদ করে রেখেছেন। এখন তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন।
নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চাকদার বলেন, “সম্প্রতি বৃষ্টিতে বোরো ধানের গুণগতমান কমে গেছে। এতে চালকল পর্যায়ে দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে।”
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, আবার ভোক্তারাও চড়া দামে চাল কিনছেন। কেবল মধ্যস্থতাকারী ও মজুদকারীরাই লাভবান হচ্ছেন।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, “কৃষকের হাতে থাকলে দামে চাপ দেয়া হয়, আর বাজারে গেলে দাম বাড়ে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভোক্তা হয় বিভ্রান্ত। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।”
অন্যদিকে, অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ডিম ডজনপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম কমে দাঁড়িয়েছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে।
সবজির বাজারেও তুলনামূলক স্থিতি দেখা গেছে। পটল, ঢেঁড়স ও ঝিঙে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে আলুর দাম বেড়ে কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হয়েছে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যদি বাজার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।