ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন আলোচনার সম্ভাবনা যাচাই করতে জেনেভায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যদিও কূটনীতিকরা বলছেন, ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি—এই তিন দেশের (ইথ্রি) মন্ত্রীরা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান পৃথকভাবে বৈঠকে বসেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির সঙ্গে। আলোচনা শুরু হয় দুপুরের পর।
বৈঠকের আগে ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা বলেন। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রুবিও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আলোচনার জন্য উন্মুক্ত আছে, যদিও ইসরায়েলের হামলায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন।
সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় মিত্রদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছেন।
ইউরোপীয় এক কূটনীতিক বলেন, “আমরা আমেরিকানদের মতো আলোচনায় বসতে পারি না, কিন্তু আমরা ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে চাই। বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, রাশিয়ার প্রতি সমর্থন এবং ইউরোপীয় নাগরিকদের আটক রাখার বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের উদ্বেগ জানানো হবে।”
ইসরায়েল এই মুহূর্তে যুদ্ধ থামাবে না—এই ধারণা ইথ্রি কূটনীতিকদের মধ্যেও রয়েছে। তাই তারা ইরানকে আলোচনায় আগ্রহী কি না, তা জানার জন্য জেনেভা বৈঠককে কাজে লাগিয়েছে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরা জানান, একটি সমান্তরাল আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না। এই আলোচনায় কঠোর পরিদর্শন এবং সীমিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের আওতায় একটি চুক্তির ভিত্তি তৈরি করার চেষ্টা থাকবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শুক্রবার জানান, নতুন চুক্তিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনা উচিত। যা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি হয়েছে।
তবে ইরানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, এমন প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করবে। বিশেষ করে, ইসরায়েলের হামলা চলাকালীন এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই।
আরাকচি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে ভাষণে ইসরায়েলকে কূটনীতির প্রতি “বিশ্বাসঘাতক” আখ্যা দেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রতিনিধি তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে জেনেভাতেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে প্রথম চুক্তির সূচনা হয়। পরে ২০১৫ সালে ব্যাপক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
গত ১২ জুন ইসরায়েল “অপারেশন রাইজিং লায়ন” নামে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এর পর থেকেই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আলাদা আলোচনা ভেঙে পড়ে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরা বলছেন, যদিও বড় কোনো অগ্রগতি প্রত্যাশা করা যাচ্ছে না, তবে আলোচনার পথ খোলা রাখা জরুরি। যুদ্ধ থেমে গেলেও ইরানের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা অক্ষুণ্ণ থাকবে—এমনটাই মনে করছেন তারা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।