রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার মন্তব্য করেছেন, “আমার দৃষ্টিতে সারা ইউক্রেনই আমাদের”। তিনি সতর্ক করেছেন, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সুমি শহর দখলের দিকে এগিয়ে যেতে পারে, যা সীমান্তের কাছাকাছি একটি অঞ্চল রক্ষার কৌশলের অংশ।
পুতিনের এই বক্তব্য ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি একে মার্কিন শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি রাশিয়ার ‘সম্পূর্ণ অবজ্ঞা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়া, লুহানস্ক অঞ্চলের ৯৯ শতাংশের বেশি, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭০ শতাংশের বেশি এবং খারকিভ, সুমি ও ডনিপ্রোপেট্রভস্কের কিছু অংশ।
সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন বলেন, “রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ানরা এক জাতি। সেই দিক থেকে দেখলে পুরো ইউক্রেনই আমাদের।”
কিয়েভ ও পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একে ‘সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
পুতিন আরও বলেন, ইউক্রেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, তখন তারা নিরপেক্ষতার কথা বলেছিল। এখন বাস্তবতা মেনে নিলে তবেই শান্তির সুযোগ থাকবে।
“রাশিয়ায় একটা প্রবাদ আছে,” পুতিন বলেন, “যেখানে রুশ সেনার পা পড়ে, সেটা আমাদেরই।”
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, “পুতিনের মন্তব্য রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাবের প্রমাণ। রাশিয়া আরও ইউক্রেনিয়ান অঞ্চল দখলের পরিকল্পনা করছে।”
তিনি বলেন, “যেখানে রুশ সেনারা যায়, সেখানেই মৃত্যু, ধ্বংস আর নিপীড়ন নিয়ে যায়।”
জেলেনস্কি তার প্রতিদিনের ভাষণে বলেন, “রাশিয়া প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে তারা যুদ্ধ থামাতে চায় না। সুমি অঞ্চলে রুশ বাহিনী প্রবেশের চেষ্টা করছে, তবে আমাদের বাহিনী সেগুলো প্রতিহত করছে।”
পুতিন স্পষ্ট করেছেন যে সুমি শহর দখল রাশিয়ার মূল লক্ষ্য নয়, তবে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেননি।
“আমাদের লক্ষ্য সীমান্ত এলাকায় একটি বাফার জোন তৈরি করা। পরবর্তী লক্ষ্য সুমি শহর হতে পারে। যদিও এটি দখল আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়, তবে একে উড়িয়ে দিচ্ছি না,” পুতিন বলেন।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান এই সংঘাত এবং পুতিনের সর্বশেষ মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়েও তৈরি হয়েছে নতুন করে সংশয়।