মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যে জেড খনি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সেনা সরকারের (জান্তা) বাহিনী ও সরকারবিরোধী গেরিলা যোদ্ধাদের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। শুক্রবারের এই সংঘাতে স্থানীয়দের মতে, বহু ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে এবং অন্তত ১৫ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার একাধিক ফ্রন্টে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। বিভিন্ন পক্ষ দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ দখলে নিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কাচিন রাজ্যের হপাকান্ত টাউনশিপের জেড খনি অঞ্চল নিয়ে সর্বশেষ এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
কাচিন স্বাধীনতা বাহিনীর (কেআইএ) মুখপাত্র নও বু বলেন, “জান্তা বাহিনী কিছু জেড খনি কোম্পানির এলাকায় প্রবেশ করে ট্রাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম পুড়িয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য আমাদের অর্থনৈতিক উৎস বন্ধ করা।”
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং মিয়ানমার জান্তার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২৮ মে থেকে চলমান লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ জন বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকেই আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
জাতিসংঘের মতে, মিয়ানমারে বর্তমানে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ গৃহযুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক সংকটে রয়েছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জেড খনিজ মজুত রয়েছে কাচিন রাজ্যে। চীনা সংস্কৃতিতে জেড পাথর শুভ লক্ষণের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। উচ্চমানের জেডের দাম চীনের বাজারে আকাশছোঁয়া।
এছাড়া, স্বর্ণ, রুবি এবং রেয়ার আর্থ খনিজসম্পদে ভরপুর মিয়ানমারের খনি খাত যুদ্ধের সময়েও বড় পরিসরে সচল রয়েছে।
চীন এই রেয়ার আর্থ খনিজের অন্যতম প্রধান ক্রেতা, যা তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জেড ও রেয়ার আর্থের মতো খনিজসম্পদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই যুদ্ধে অর্থের জোগান নিশ্চিত করা যায়। সে কারণেই এসব এলাকায় লড়াই আরও তীব্র হচ্ছে।
মিয়ানমারের সংকট ক্রমেই গভীর হচ্ছে, আর মূল্যবান খনিজসম্পদগুলো এখন যুদ্ধের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।